সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন : সিদ্ধান্তহীনতায় বিএনপি-জামায়াত
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৯-২০ সালের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামী ১৩ ও ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। সমিতির বর্তমান কমিটির ১৪টি পাদের মধ্যে সহ-সম্পাদকসহ মাত্র চারটি পদ আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের। আর সভাপতি-সম্পাদকসহ বাকি ১০টি পাদে আছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে।
তবে এবারের নির্বাচনকে যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার সমর্থক আইনজীবীরা। ইতোমধ্যে প্যানেল ঘোষণা করেছে সরকার সমর্থক সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল)। গত ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠানিকভাবে প্যানেল ঘোষণা করার পর আইনজীবীদের মধ্যে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে সরকার সমর্থক প্রার্থীরা।
অন্যদিকে, বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের ‘নীল’ প্যানেল এখনও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। যোগ্য, জনপ্রিয়, দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ও খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে যারা মাঠে সক্রিয় তাদের প্রার্থী করার দাবি করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রার্থী ঠিক করতে সাবেক স্পিকার ও প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ইতোমধ্যে সিনিয়র আইনজীবীদের সাথে আলোচনা করছেন। প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ইতোমধ্যে দলটির গুলশান অফিসে আলোচনা শুরু হয়েছে। তাছাড়া নির্বাচন ঘিরে সুপ্রিম কোর্টেও বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এবারের নির্বাচনে বিএনপি-জাময়াত সমর্থিত প্যানেল থেকে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল জামিল (এ জে) মোহাম্মদ আলীকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। তাছাড়া সভাপতি প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সভাপতির অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের নাম শোনা যাচ্ছে। আর সম্পাদক হিসেবে বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহাবুব উদ্দিন খোকনকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। তা না হলে অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে মনোনয়ন দিতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিএনপির একাধিক আইনজীবীর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আইনজীবীদের সূত্র আরও নিশ্চিত করে জানিয়েছেন যে, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সিনিয়র আইনজীবীরা দেখা করার পর তার পরামর্শ অনুযায়ী মনোনয়ন দেয়া হবে। তবে, কাকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেননি বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল জাগো নিউজকে বলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের ‘নীল’ প্যানেলের প্রার্থী ঠিক করতে সিনিয়র আইনজীবীরা কাজ করছেন। খুব শিগগিরই সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীদের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হবে।
সরকার সমর্থক আইনজীবীদের প্যানেল চূড়ান্ত :
সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনকে সামনে রেখে প্যানেল ঘোষণা করেছে সরকার সমর্থক সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল)। গত ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্যসচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এই প্যানেল ঘোষণা করেন।
সাদা প্যানেলের সভাপতি পদে সমিতির সাবেক সম্পাদক সিনিয়র আইনজীবী আবু আহমেদ (এএম) আমিন উদ্দিন ও সম্পাদক পদে বাংলাদেশ আইন সমিতির সাবেক সম্পাদক আইনজীবী আবদুন নূর দুলালের নাম ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া সহ সভাপতি (দুটি) পদে বিভাষ চন্দ্র বিশ্বাস ও মো. জসিম উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ পদে সৈয়দ আলম টিপু, সহ-সম্পাদক (দুটি) পদে মোহাম্মদ বাকির উদ্দিন ভূঁইয়া ও কাজি শামসুল হাসান শুভ, কার্যনির্বাহী সদস্য পদে মোহাম্মদ জগলুল কবির, মশিউর রহমান, শামীম সরদার, আফিয়া আফরোজি রানী, আওলাদ হোসেন ও হুমায়ূন কবিরের নাম ঘোষণা করা হয়।
আগামী ১৩ ও ১৪ মার্চ দুই দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি (বার) ভবনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল এবং ৬ মার্চ মনোনয়ন প্রত্যাহারের তারিখ ধার্য করা হয়েছে। ১৩ ও ১৪ মার্চ দুই দিনব্যাপী ভোটগ্রহণ করা হবে। এবার সুপ্রিম কোর্ট বারের সদস্য সংখ্যা হচ্ছে আট হাজার ৮৮ জন।
এফএইচ/এমবিআর/আরআইপি