দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের জরিপ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:১০ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ঢাকাসহ সারাদেশের বাজারগুলোতে কোন কোন কোম্পানির দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কিটনাশক এবং সীসা মেশানো রয়েছে তা নিরূপণ করে একটি জরিপ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে, দুধের সঙ্গে সিসা মিশ্রণকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

এ সংক্রান্ত কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন নজরে আনা হলে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এ কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

প্রতিবেদনগুলো আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মামুন মাহবুব। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

আইনজীবী একে এম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, দেশের ভেতরে উৎপাদিত ও বাজারে প্যাকেটজাত দুধ, দই ও গো খাদ্যে ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক, অ্যান্টিবায়োটিক, সীসা, রাসায়নিকের মাত্রা নিরূপনে বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে জরিপ চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ বিসয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৩ মার্চ ঠিক করেছেন আদালত। একই সঙ্গে একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবেদককে প্রতিবেদনটি হলফনামা আকারে দাখিল করতে বলেছেন।

সরকারের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের (এনএফএসএল) এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর নজরে আসার পর সোমবার স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এসব আদেশ দেন হাইকোর্ট।

আদেশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে জরিপ চালিয়ে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও কেন্দ্রীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটিকে হলফনামা আকারে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

আদালতের দেয়া রুলে বলা হয়েছে, নিরাপদ দুধ, দই ও গো খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে ও ভেজাল প্রতিরোধে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না? পাশাপাশি দুধ-দই ও গো খাদ্যে ভেজাল মেশানোর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

খাদ্য সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব, কৃষি সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, কেন্দ্রীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিএসটিআই চেয়ারম্যানকে আগামী চার সপ্তাহের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে আজ দুধ, দই ও দুধজাত পণ্যে ভেজাল মেশানোকে ‘মারাত্মক দুর্নীতি’ বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত। হাইকোর্ট বলেছেন, খাদ্যে ভেজাল মেশানো একটি সিরিয়াস করাপশন। এ ধরনের ভেজালে মানুষের কিডনি, লিভার নষ্ট হচ্ছে, ক্যান্সার হচ্ছে।

বিচারক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মানুষ শুধু টাকার পেছনে ঘুরছে। দেশ ও দেশের মানুষ নিয়ে কেউ ভাবছে না। স্বাস্থ্যই যদি ঠিক না থাকে, তাহলে এত টাকা-পয়সা দিয়ে হবেটা কী?

আদেশের পর মামুন মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, দুধ, দই, গো খাদ্যে ভেজাল মেশানো এবং তা বাজারজাত করাকে আদালত সিরিয়াস করাপশন বলেছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান, তদন্ত করে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে দুদককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আদেশের আগে প্রথমেই আদালত এ বিষয়ে সরকার ও দুদকের বক্তব্য জানতে চান। পরে আদালত অন্তর্র্বতী নির্দেশনাসহ রুল জারি করেছেন।

সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় গো খাদ্য, দুধ, দই ও বাজারে থাকা প্যাকেটের পাস্তুরিত দুধ নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগার (এনএফএসএল) জরিপ চালায়। এনএফএসএল জরিপের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাভির দুধের ৯৬টি নমুনা সংগ্রহ করে। ঢাকাসহ তিন জেলার ছয়টি উপজেলাসহ ১৮টি স্থান থেকে দুধের পাশাপাশি অন্যান্য নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। গাভির দুধ ও গোখাদ্য সরাসরি খামার থেকে সংগ্রহ করা হয়।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকান ও আশপাশের উপজেলার দোকান থেকে দই সংগ্রহ করে এনএফএসএল। বিভিন্ন সুপার স্টোর থেকে সংগ্রহ করা হয় বাজারে প্রচলিত প্রায় সব ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত তরল দুধ এবং আমদানি করা প্যাকেট দুধ। গোখাদ্যের ৩০টি নমুনা পরীক্ষা করে কীটনাশক (২ নমুনায়), ক্রোমিয়াম (১৬টি নমুনায়), টেট্রাসাইক্লিন (২২টি নমুনায়), এনরোফ্লোক্সাসিন (২৬টি নমুনায়), সিপ্রোসিন (৩০টি নমুনায়) এবং আফলাটক্সিন (৪টি নমুনায়) গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রা পাওয়ার কথা জানিয়েছে এনএফএসএল।

গাভির দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯ শতাংশ দুধে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কীটনাশক, ১৩ শতাংশে টেট্রাসাইক্লিন, ১৫ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় সীসা পেয়েছে তারা। ৯৬ শতাংশ দুধে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াও পাওয়া গেছে।

প্যাকেটের দুধের ৩১টি নমুনায় ৩০ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি হারে টেট্রাসাইক্লিন পাওয়ার কথাও জানিয়েছে এনএফএসএল। একটি নমুনায় সীসা মিলেছে। একই সঙ্গে ৬৬ থেকে ৮০ শতাংশ দুধের নমুনায় বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া পাওয়ার কথা জানিয়েছে তারা।

দইয়ের ৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করে একটিতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি সীসা পাওয়ার কথা জানিয়েছে এনএফএসএল। ৫১ শতাংশ নমুনায় মিলেছে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া।

এফএইচ/জেডএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।