বার নির্বাচন : আ.লীগের প্রার্থী ঠিক করবেন শেখ হাসিনা

মুহাম্মদ ফজলুল হক
মুহাম্মদ ফজলুল হক মুহাম্মদ ফজলুল হক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:১৮ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের শীর্ষ সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৯-২০২০ সালের নির্বাচন আগামী মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। সে হিসেবে শুরু হয়েছে নির্বাচনী তোড়জোড়। সে লক্ষ্যে সরকার পক্ষ এবং সরকারের বিরোধী পক্ষ তৎপরতা শুরু করেছে।

সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে একজনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে, সভাপতি পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দফতরে। সে হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট বারের ভোটে প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই ঘোষণা করা হবে তাদের প্যানেলের প্রার্থীদের নাম। তারপর থেকে শুরু হবে আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের নির্বাচনী প্রচারণা।

নির্বাচনে প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থক সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের ‘সাদা’প্যানেল এবং বিএনপি-জামায়াতসমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের ‘নীল’ প্যানেলের মধ্যে। তবে, এবারের নির্বাচনে কে জিতবেন তার জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করলেও নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রার্থী বাছাইটি ভোটারদের মন আর্কষণ করার ক্ষেত্রে কোনো অংশে কম না বলে ধারণা করছেন সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণের আইনজীবীরা।

আওয়ামলী লীগের এবারের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে যাদের নামের গুঞ্জন রয়েছে তারা হলেন অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী ও সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন। এই দুই আইনজীবীর নাম প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনীত করবেন তিনিই হবেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের চূড়ান্ত প্রার্থী।

অন্যদিকে, সম্পাদক হিসেবে একজনের নামের গুঞ্জন রয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল। তিনি বাংলাদেশ আইন সমিতির সাবেক সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

সভাপতি হিসেবে দুইজনের নামসহ সকলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানানো হবে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। বারের সম্পাদক হিসেবে অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলালকে ছাড়া বাকি পদগুলোর মধ্যে সহ-সভাপতি পদে যথাক্রমে জসিম উদ্দিন ও জোবায়দা রহমান, অর্থ সম্পাদক সৈয়দ আলম টিপু ও সহ-সম্পাদক হিসেবে বাকির উদ্দিন ভূঁইয়াকে চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জাগো নিউজকে জানান অ্যাডভোকেট এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচন এরপর পর্যায়ক্রমে সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরই ধারাবাহিকতায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিকে ঘিরে চলছে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা।

এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারবিরোধী বিএনপি-জামায়াত উভয় প্যানেলই দাবি করছে, বিচারাঙ্গনের সর্বোচ্চ এই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য লড়বেন তারা। দুই প্যানেলই নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

তবে, এবার প্রার্থী হিসেবে থাকছেন কারা-সেটাই মূল আকর্ষণের বিষয়। শক্ত প্রার্থী দেয়ার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কোন্দল কমিয়ে আনাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে যেকোনো মূল্যে বিজয় ছিনিয়ে আনতে মাঠে রয়েছেন সরকার সমর্থক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা।

অন্যদিকে, সংগঠনের পূর্ণ শক্তি ফিরে পেতে মরিয়া বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। নিজেদের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দখলে নিতে দুই দলের আইনজীবীরাই ব্যস্ততার সময় কাটাতে শুরু করেছেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৯-২০২০ সেশনের নির্বাচনের জন্য সরকার সমর্থকদের সাদা প্যানেলের চূড়ান্ত করে প্রার্থীদের নাম ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। জানা গেছে, আজ সোমবার দুপরে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তলিকা প্রকাশ করা হবে। তবে, সভাপতিসহ সকল পদের প্রার্থীদের নাম দলটি এখনও চূড়ান্ত করতে না পারলেও আজকের মধ্যেই প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মো. মোখলেসুর রহমান বাদল ও এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবনে এক সভায় সরকারসমর্থক আওয়ামী সমন্বয় পরিষদের এই প্যানেল চূড়ান্ত করার জন্য আইনজীবীদের নাম বাছাই হয়। অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিরোধী বিএনপি ও জামায়াত-সমর্থিত জাতীয়তাবাদী ঐক্যের (নীল প্যানেল) প্রার্থীদের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সিমিতির নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির আইনজীবী ফোরামের কোনো বৈঠক এখনও পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে, বৈঠকে বসার প্রক্রিয়ার চলছে। এ বিষয়ে বিএনপি নেতা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বারের) সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচনে কাকে প্রার্থী করা হবে-এ বিষয়ে আমরা এখনও কোনো বৈঠক করিনি। তবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দলের সিনিয়র আইনজীবী ও দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বসে প্রার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

মাহাবুব উদ্দিন খোকন আরও জানান, সরকারি দলের প্রার্থী ঠিক করার পর আমরা ধীরে-সুস্থে চলতি সপ্তাহ বা আগামী সপ্তাহে বৈঠক শেষে ঠিক করব কাদের চূড়ান্ত প্রার্থী করা হচ্ছে।

তবে, গুঞ্জন রয়েছে ২০১৯-২০ সেশনে বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। এ ছাড়া সভাপতি প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন অ্যাডভোকেট এ জে মুহাম্মদ আলী, সাইদুর রহমান ও তৈমুর আলম খন্দকারের নাম।

অন্যদিকে, বিএনপির সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে যাদের নামের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে তারা হলেন বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহাবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল, মনির হোসেন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সরকারসমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের (সাদা প্যানেল) চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম বাছাই করার সময় উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ আইনজ্ঞদের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তবে আলাপকালে তারা কোনো প্রার্থীর নাম প্রকাশ করতে চাননি। তারা জানান, খুব শিগগিরই পুরো প্যানেলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে চায় না।’

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের মানবাধিকারবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রসিকিউটর মো. মোখলেসুর রহমান বাদল জাগো নিউজকে জানান, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কাযার্লয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৯-২০২০ সেশনের নির্বাচন নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে প্রার্থীদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সমিতির নির্বাচনের জন্যে এবার সভাপতি, সম্পাদক ও অন্যান্য পদের জন্য আইনজীবীদের মধ্য থেকে নাম বাছাই করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তিনি যাদেরকে প্রার্থী হিসেবে ঠিক করবেন তাদেরকে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হবে।’

বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ছাড়াও নির্বাচন নিয়ে বৃহস্পতিবারের সভায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম, কাজী নজিবুল্লাহ হিরু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন মো. মোখলেসুর রহমান বাদল।

দেশের আইনজীবীদের অন্যতম সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (২০১৮-১৯) নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিলেন। সভাপতি, সম্পাদকসহ ১০টি পদে জয় পেয়েছেন বিএনপি ও জামায়াত-সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল হিসেবে পরিচিত) সমর্থিত প্রার্থীরা। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীদের মোর্চা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা হিসেবে পরিচিত) সমর্থিত প্রার্থীরা ৪টি পদে জয় পেয়েছেন।

২০১৭-১৮ সেশনের নির্বাচনে ১৪ পদের মধ্যে সভাপতি ও সম্পাদকসহ মোট ৮টি পদে জয়ী হয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল প্যানেল)।

অন্যদিকে, ক্ষমতাসীনদের মোর্চা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) পেয়েছিল ৬টি পদ।

প্রসঙ্গত, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির (সুপ্রিম কোর্ট বার) ২০১৯-২০২০ সেশনের নির্বাচন আগামী ১৩ ও ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন ব্যারিস্টার এ একে এম এহসানুর রহমান। তবে, এখনও নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়নি।

এফএইচ/এসআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।