ভারতে কারাবন্দি বাদল ফরাজিকে নিয়ে হাইকোর্টের রুল
‘বিনা অপরাধে’ ভারতের কারাগারে প্রায় ১০ বছর বন্দী থাকার পর অবশেষে দেশে ফিরিয়ে আনা বাদল ফরাজিকে আদালতে হাজির করা নিয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এক সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব (সুরক্ষা বিভাগ), পররাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আইন ও সালিস কেন্দ্রের পক্ষে করা এক রিটের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
আদালতে আজ রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান শাহীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (বাশার)।
পরে শাহীনুজ্জামান বলেন, কেরানীগঞ্জ কারাগারে থাকা বাদল ফরাজিকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়নি-তা নিশ্চিত করতে কেন তাকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেয়া হবে না, সেই মর্মে রুল জারি করেছেন আদালত।
গত বছরের ৬ জুলাই বিকেলে জেট এয়ারের একটি ফ্লাইটে বাদলকে নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান দেশের প্রতিনিধি দল। এরপর প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে তাকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। ৮ জুলাই তাকে মুক্তি দিতে একটি রিট করেছিলেন সুপ্রিমকোর্টের দুই আইনজীবী। যেটি একই বছরের ১১ জুলাই উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়ে যায়।
ভারতের সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় দিল্লির তিহার জেলে বন্দী বাংলাদেশের নাগরিক বাদল ফরাজিকে (২৮) ফিরিয়ে আনা হয়। ওই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, দেশে ফিরিয়ে আনার পর বাদল ফরাজিকে জেলে রেখেই বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যা করার তাই করা হবে।
বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের কাছে ১৭ নম্বর ফারুকি রোডের বাসিন্দা আবদুল খালেক ফরাজি ও সারাফালি বেগমের ছেলে বাদল। টি এ ফারুক স্কুলের অষ্টম শ্রেণি পাস বাদলের ইচ্ছা ছিল তাজমহল দেখার। এমন ইচ্ছায় ২০০৮ সালের ১৩ জুলাই দুপুরে বেনাপোল অভিবাসন কার্যালয়ে সব প্রক্রিয়া শেষ করে ভারতের হরিদাসপুর সীমান্তে প্রবেশের পরই সেখানকার একটি খুনের অপরাধে বাদলকে আটক করে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। হিন্দি বা ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে না পারার কারণে বিএসএফের কর্মকর্তাদের বোঝাতেই পারেননি যে খুনের অভিযোগ যে বাদলকে খোঁজা হচ্ছে তিনি সেই ব্যক্তি নন।
২০০৮ সালের ৬ মে দিল্লির অমর কলোনিতে এক বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগে বাদল সিং নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছিল পুলিশ। তাকে ধরতে সীমান্তেও সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু শুধু দু’জনের নাম এক হওয়ায় বাংলাদেশি নাগরিক বাদল ফরাজিকে আটক করে বিএসএফ। পরে ওই খুনের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ নম্বর ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয় বাদলের বিরুদ্ধে।
২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বাদলকে দোষী সাব্যস্ত করে দিল্লির সাকেট আদালত বাদলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। দিল্লি হাইকোর্টও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন। পরে বাদল ফরাজির স্থান হয় দিল্লির তিহার জেলে। বিনা দোষে এই সাজা মেনে না নিয়ে বাদল ফরাজি দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তায় সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করেন। পরে শীর্ষ আদালতও বাদলের আবেদন খারিজ করে দেন। ফলে গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে জেলেই কাটাতে হয়েছে বাদলকে।
এফএইচ/এসআর/আরআইপি