শুনানিতে অংশ নেননি ১৬ বছর : হাইকোর্টে অর্থদণ্ড, অতঃপর...
বিচারিক আদালতের মামলা হাইকোর্টে স্থগিতের পর দীর্ঘ ১৬ বছর মামলাটির আর কোনো শুনানিতে অংশ না নেয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানিক লাল আচার্যকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার জন্য মতামত দেন হাইকোর্ট। কিন্তু ওই আইনজীবী নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় আদালত তাকে জরিমানা থেকে রেহাই দিয়েছেন।
একইসঙ্গে জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার বিরাজকান্তি ভৌমিকের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে চলমান মামলার ওপর জারি করা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন আদালত। এর ফলে, তার বিরুদ্ধে মামলা চলতে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে বিরাজকান্তি ভৌমিকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মানিক লাল আচার্য। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিরাজকান্তি ভৌমিকের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুর্নীতি মামলাটি বাতিল চেয়ে ২০০৩ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন তার আইনজীবীরা। পরে হাইকোর্ট একই বছরের ৬ এপ্রিল মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন এবং মামলাটি কার্যক্রমের ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন। তবে এরপর দীর্ঘ ১৬ বছরেও মামলার রুল শুনানিতে হাজির হননি সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। এর ফলে দীর্ঘ ১৬ বছর পর বিচারিক আদালতে এ মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করতে সাক্ষী খুঁজে পাওয়া থেকে শুরু করে নানা বাধার মুখে পড়বেন আইনজীবীরা। এ কারণেই হাইকোর্ট ওই আইনজীবীকে জরিমানা করতে চেয়েছিলেন।’
দীর্ঘ ১৬ বছর পর মামলাটির শুনানি করতে আসায় আইনজীবী মানিক লাল আচার্যকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে বলে জানান হাইকোর্ট। কিন্তু এই মামলায় সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ বি রায় চৌধুরী যুক্ত আছেন বলে আদালতকে অবহিত করা হলে আদালত বলেন, ‘আপনাকে (মানিক লাল আচার্য) ৫০ হাজার ও আপনার সিনিয়রকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। এরপর আইনজীবী মানিক লাল আচার্য আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে জরিমানা করা থেকে অব্যাহতি দেন হাইকোর্ট।’
পাশাপাশি বিচারিক আদালতে থাকা মামলাটির বাতিল বিষয়ে জারি করা রুল খারিজ করেন এবং স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন বলেও জানান পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন।
ঘটনার বিবরণী থেকে জানা গেছে, ১৬ বছর আগে মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগীবাড়ী থানার অ্যাকো ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজের পক্ষে জনতা ব্যাংকের বেতকা শাখা থেকে ২ হাজার ৭২০ টন আলুর বিপরীতে ৯৮ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে কোল্ড স্টোরেজের পক্ষে ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৭ টাকা ঋণের জামানত হিসাবে রক্ষিত ১৫ হাজার ৪৭৯ বস্তা আলু আত্মসাৎ করা হয়। যা পরে তদন্ত করে তৎকালীন জেলা দূর্নীতি দমন অফিসার আর কে মজুমদার ৭ জনকে আসামি করে টংগীবাড়ী থানায় ১৯৯৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলা করেন। পরে মামলাটি মুন্সীগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে বিচারের জন্য উঠলে তা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানানো হয়।
এফএইচ/এসআর/বিএ