নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৪১ পিএম, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নদী দখলের অভিযোগ উঠলে তিনি এমপি নির্বাচন থেকে শুরু করে সকল নির্বাচনে অযোগ্য হবেন বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। নদী দখলের মতো অভিযোগ থাকলে সরকারি বা বেসরকারি কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও অযোগ্য হবেন বলেও নির্দেশনায় জানান আদালত।

নদী রক্ষায় প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচন কমিশন এবং বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি এই নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে নদী রক্ষার জন্য দেয়া রায় বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া এ-সংক্রান্ত রায়ের কপি (অনুলিপি) প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

হাইকোর্ট বলেছেন, এ রায়ের কপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হোক। যাতে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশের নদ-নদী, খাল-বিল সম্পর্কে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।

তুরাগ নদীকে জীবন্ত সত্তা (লিগ্যাল পারসন) ঘোষণা করে রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব নির্দেশনাসহ বিভিন্ন ধরনের পর্যবেক্ষণ দিয়ে মামলার রায় ঘোষণা করেন।

এর আগে গত ৩০ এবং ৩১ জানুয়ারি পরপর দুইদিন রায় পড়েন আদালত। আজ ছিল রায় ঘোষণার শেষদিন। আদালতে আজ রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পূরবী রানী শর্মা ও পূরবী সাহা।

রায়ে তুরাগ নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে দেশের সব নদ-নদী-খালের আইনগত অভিভাবক ঘোষণা করছেন হাইকোর্ট। দেশের সব নদ-নদী-খাল-জলাশয় ও সমুদ্র সৈকতের সুরক্ষা এবং তার বহুমুখী উন্নয়নে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বাধ্য থাকবে বলেও রায়ে উল্লেখ করেছেন আদালত।

আদালত তার রায়ে নির্দেশনা দিয়ে নদী দখলকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে কঠিন সাজা ও জরিমানা নির্ধারণ করে অভিযোগ দায়ের, তদন্তের ব্যবস্থা রেখে ২০১৩ সালের নদী রক্ষা আইন সংশোধন করে ছয় মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন। পাশাপাশি নদী রক্ষা কমিশন আইনের যেসব সংশোধন প্রস্তাব করেছে, তা অনতিবিলম্বে বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া নদী রক্ষা কমিশনকে একটি স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সবধরনের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও নদী রক্ষায় প্রতিরোধমূলক নির্দেশনা হিসেবে আদালত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই মাসে একদিন এক ঘণ্টা করে নদী দূষণের ওপর সচেতনতামূলক ক্লাসের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এছাড়াও দেশের বড়, মাঝারি ও ছোট শিল্পকারখানার শ্রমিকদের অংশগ্রহণে দুই মাস অন্তর একদিন এক ঘণ্টা করে নদী বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়টি তদারকি করতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে স্থানীয় ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে তিন মাস অন্তর এক দিনব্যাপী নদীবিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্ব স্ব অধিক্ষেত্রে সব অবৈধ নদী দখলদারদের নাম প্রকাশ করতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ মামলাটি চলমান তদারকিতে থাকবে বলে রায়ে বলেন আদালত।

আদালত তার রায়ে, মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়া তুরাগ তীরে থাকা ১৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে তাদের স্থাপনা ৩০ দিনের মধ্যে নিজ খরচে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ওই সব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের খরচায় উচ্ছেদের ব্যবস্থা করবে বলেও আদেশ দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে দেশের একটি ইংরেজি দৈনিকে এ জাতীয় এক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে একই বছরের হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হয়।

ওই রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, বিআইডব্লিউটিএকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী তারা আদালতে তালিকা দাখিল করেন। কিন্তু রিটকারী আইনজীবী বিচারবিভাগীয় তদন্তের আবেদন জানালে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।

এর আগে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট ঢাকার আশপাশের চার নদীর মামলার সীমানা জরিপ অনুযায়ী তুরাগ নদীর তীরে ভূমি দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত করতে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ মোতাবেক গাজীপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আসসামস জগলুল হোসেন তদন্ত কাজ শুরু করেন।

এরপর এ সংশ্লিষ্ট তদন্ত প্রতিবেদনে এনন টেক্স, ড. ফরাস উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়, কর্ডোড ল্যান্ড ডেভেলপার এবং ক্যাপ্টেন জাকির হোসেন, রিয়াজ উদ্দিন, প্রত্যাশা হাউজিং, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, নার্গিস আক্তার অ্যান্ড সালাহ উদ্দিন, মো. জাহাঙ্গীর জিপার ফ্যাক্টরি, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ড্রাইভারস ইউনিয়ন, সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ, ইউনুস মেম্বার, (আনন্দ গ্রুপ) জরিনা টেক্সটাইল, হামিম গ্রুফের সাজিদ ওয়াসিং, বিশ্ব ইজতেমা, শিল্প সম্পর্কিত শিক্ষায়ন, টঙ্গী নিউ মার্কেট (মসজিদ মার্কেট), শাহ আলম গং, মোসলেম সরকার, মেজবাহ উদ্দিন সরকার, আব্দুল হাই, আবু তাহের, গিয়াস উদ্দিন, ছোবহান শেখ, লুৎফা বেগম, ডলি বেগম, সেলিম শেখ, ফজলু মিয়া, আনোয়ার গ্রুপ, দি মার্চেন্ট লি, অ্যান্ড প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি, টেক্সাটাইল মালিক ইমান আলীসহ মোট ৩০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে। এরপর দীর্ঘদিন পর এ মামলার রুল শুনানি শেষে উক্ত রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

এফএইচ/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।