ট্রাইব্যুনালে স্বামী ও ভাই হত্যার বর্ণনা দিলেন ফাতেমা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০৪ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেরপুরের এসএম আমিনুজ্জামান ফারুকসহ চারজনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী মোছা. ফাতেমা খাতুন তার জবানবন্দি পেশ করেছেন। জবানবন্দিতে তিনি নিজের স্বামী এবং ভাই হত্যার বর্ণনা তুলে ধরেন।

ফাতেমা খাতুন বলেন, এসএম আমিনুজ্জামান ফারুকসহ অন্যান্য রাজাকাররা আমার স্বামী আব্দুল কুদ্দুস, বড় ভাই আব্দুল মান্নান ও জেঠাতে ভাই মোবারককে ধরে নির্যাতন করে। এরপর আমার স্বামীসহ চারজনকে গুলি করে হত্যা করে।

মামলায় প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দি উপস্থাপন শেষে সাক্ষীকে জেরা করার জন্য আগামী ১১ মার্চ দিন ঠিক করেছেন আদালত।

বুধবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলার পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। অন্যদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সুবহান তরফদার।

জবানবন্দিতে সাক্ষী বলেন, রাজাকাররা আমার বাড়ির পাশে কালভার্টের কাছে সোহরাবকে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় আমি ঘরেই ছিলাম।

সাক্ষ্যের শুরুতে খাতেমা খাতুন বলেন, আমার নাম ফাতেমা খাতুন। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৭ বছর। ঠিকানা- গ্রাম দক্ষিণ রামের কান্দি, থানা- নকলা, জেলা- শেরপুর। আমার বড় ভাই আব্দুল মান্নান আওয়ামী লীগের একজন নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। ১৯৭১ সালের শ্রাবণ মাসের প্রথম দিকে একদিন আনুমানিক সকাল ১১টার দিকে আমাদের এলাকার রাজাকার হাবিবুর রহমান চেয়ারম্যান, রাজাকার ও আলবদর আকরাম, আলবদর ফারুক, রাজাকার তারা (বর্তমানে মৃত) আমাদের বাড়িতে এসে আমার বড় ভাই আব্দুল মান্নানকে হত্যা করার হুমকি দিয়ে যায়।

ঐ শ্রাবণ মাসের ৪ তারিখ রাত আনুমানিক ৪টার সময় আমার বর্ণিত রাজাকারসহ আরো কয়েকজন আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে আমার ভাই আব্দুল মান্নানের ঘরে ঢুকে। ঐ মুহূর্তে আমার ভাই ঘরের ভাঙা জানালা দিয়ে বের হয়ে বাড়ির উঠানে আসেন। তখন আমার বর্ণিত রাজাকারসহ অন্যান্য রাজাকাররা দৌড়ে এসে আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। আমি ঘরের দরজার ফাঁক দিয়ে ঘটনা দেখি। এরপর বর্ণিত রাজাকার ও আলবদর ঘরে ঢুকে আমার স্বামী আব্দুল কুদ্দুস, আমার ছোট ভগ্নিপতি আজিজুর রহমানকে আটক করে ঘরের বাইরে নিয়ে আসে। আটককৃত আজিজুর রহমান পুকুরে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়। আমার স্বামীকে পুনরায় ঘরে এনে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ফেলে।

তিনি জানান, রাজাকাররা জেঠাতে ভাই মোবারককেও তার ঘর থেকে আটক করে আমার স্বামীর সঙ্গে খুঁটিতে বেঁধে ফেলে। এক পর্যায়ে তারা আমার স্বামী আব্দুল কুদ্দুস ও জেঠাতো ভাই মোবারককে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় আমি ঐ ঘরেই ছিলাম। এরপর রাজাকাররা আমার গায়ের গহনাসহ সব ঘরের মালামাল লুট করে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তারা চলে গেলে গ্রামের লোকজন এসে আমার স্বামী, বড় ভাই ও জেঠাতো ভাইয়ের লাশ দাফন করে। সোহরাবের আত্মীয়-স্বজনও তার লাশ নিয়ে যায়।

ফাতেমা খাতুন ট্রাইব্যুনালের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চান।

এফএইচ/এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।