সাজাপ্রাপ্ত দুই ডিসি আত্মসমর্পণ করে কারাগারে
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় করা মামলায় দুই বছর করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি তৎকালীন ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান ও ডিএমপির সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার ঢাকার ১নং অস্থায়ী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিনের আদালতে আত্মসমর্পণ করে আইনজীবীর মাধ্যমে তারা জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
১০ অক্টোবর সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে অবস্থিত ঢাকার ১নং অস্থায়ী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম, আবদুস সালাম পিন্টু, মাওলানা মো. তাজউদ্দীন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মো. আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে মো. ইউসুফ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, উজ্জ্বল ওরফে রতন ও হানিফ।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফের আবু ওমর আবু হোমাইরা ওরফে পীরসাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে হাফে সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ, মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মো. খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর (পলাতক), মো. ইকবাল (পলাতক), লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া (পলাতক), হারিছ চৌধুরী (পলাতক), কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মুফতি আবদুল হাই (পলাতক) এবং রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)।
হত্যা মামলা
মৃত্যদণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে রায়ে উল্লেখ করা হয়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে নিহতদের অভিন্ন অভিপ্রায়ে পরিকল্পনা ও অপরাধমূলণ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০ খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্তক্রমে মৃত্যুদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা এবং মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকরের আদেশ দেয়া হলো।
যাবজ্জীবন দণ্ডের ক্ষেত্রে রায়ে উল্লেখ করা হয়, নিহতদের অভিন্ন অভিপ্রায়ে পরিকল্পনা ও অপরাধমূলণ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০ খ/৩৪ ধারায় দোষীসাব্যস্তক্রমে যাবজ্জীবন কারদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হলো।
এছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রথম ১৯ জনের বিরুদ্ধে মোকদ্দমার জখমপ্রাপ্ত ভিকটিমকে অভিন্ন অভিপ্রায়ে পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গুরুতর জখম করার অভিযোগ দণ্ডবিধির ৩০৭/১২০ খ/৩৪ ধারায় দোষীসাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।
এছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিন্ন পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গুরুতর জখমের অভিযোগে দণ্ডবিধি ৩০৭/১২০ খ/৩৪ ধারায় দোষীসাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন দণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমান অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয় রায়ে।
বিস্ফোরক মামলা
১৯০৮ সালের বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের ৩ ও ৬ ধারায় দায়ের করা মামলায় আসামিদের দোষীসাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড, এক লাখ টাকা জারিমান এবং মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকরের আদেশ দেয়া হয়।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে রায়ে বলা হয়, ১৯০৮ সালের বিস্ফোরদ্রব্য আইনের ৩ ও ৬ ধারায় দোষীসাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।
এছাড়া ১৯০৮ সালের বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের ৪ ও ৬ ধারায় দোষীসাব্যস্ত সবাইকে (৩৮ জন) ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমান অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া ১৯ আসামির মধ্যে ১৩ জনই পলাতক। আদালতে উপস্থিত ছিলেন ছয়জন।
এদিন সকালে কারাগার থেকে ৩১ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। আলোচিত এ মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া আরও ২০ জনের সাফাই সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী।
ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)।
২০০৮ সালের ১১ জুন মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আখন্দ।
তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও জেএমবি সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়।
ফলে এ মামলায় এখন আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯ জন। এর মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। বাকি আসামিদের মধ্যে কারাগারে রয়েছেন ৩১ জন।
জেএ/জেএইচ/এমকেএইচ