‘হলি আর্টিসানে যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল’
রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁর মালিক সাদাত মেহেদী বলেছেন, `সকাল সাড়ে ৮টায় রেস্তোরাঁ থেকে ফোন আসে। রেস্তোরাঁয় এসে আমি গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। আমি সেখানে থাকা অবস্থায় দু’টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বোমার শব্দে বিল্ডিংগুলো কেঁপে ওঠে। তখন আমার কাছে মনে হচ্ছিল যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’
বুধবার (২৩ জানুয়ারি) ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে গুলশানের হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলা মামলার সাক্ষ্য দেন রেস্তোরাঁটির মালিক সাদাত মেহেদী। সাক্ষ্যতে তিনি এসব কথা বলেন।
এ দিন আরও সাক্ষ্য দেন তার স্ত্রী গৃহকর্মী সামিরা আহম্মেদ, লেকভিউ ক্লিনিকের ক্যান্টিনের ম্যানেজার আব্দুল হাকিম ও হলি আর্টিসানের শেভ মো. আকাশ খান। সাক্ষ্য শেষে তাদের জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। এরপর ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।
মেহেদী জবানবন্দিতে আরও বলেন, ‘২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত সাড়ে আটটার দিকে হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার সেজাদ আমাকে ফোন দেয়। সে আমাকে জানায়, রেস্টুরেন্টের ভেতর দুর্বৃত্তরা আল্লাহু আকবর বলে গোলাগুলি করছে। তখন আমি আরেকটি রেস্টুরেন্ট ইজুগিতে ছিলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে হলি আর্টিসানে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে পুলিশের গাড়ি দেখতে পাই।’
তিনি বলেন, ‘আমি সেখানে যাওয়ার পর বিকট শব্দে একটা বোমা ফাটে। এরপর আমার সামনে দিয়ে আহত দুইজনকে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। কিছুক্ষণ পর আবার গোলাগুলি শুরু হয়। আমি সেখানে থাকা অবস্থায় দু’টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বোমার শব্দে বিল্ডিংগুলো কেঁপে ওঠে। তখন কে কী করবে ঠিক পাচ্ছিল না। যেন যুদ্ধের মতো অবস্থা শুরু হয়ে যায়।’
২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। গত ৮ আগস্ট হলি আর্টিসান মামলায় ৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন নামে দু’জন পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি মামুনুর রশিদ রিপনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
২৩ জুলাই ৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর। আসামিদের মধ্যে ছয়জন কারাগারে এবং দু’জন পলাতক রয়েছেন।
কারাগারে থাকা ছয় আসামি হলেন- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান এবং হাদিসুর রহমান সাগর।
এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযানে ১৩ জন নিহত হওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তাদের মধ্যে আটজন বিভিন্ন অভিযানে ও পাঁচজন হলি আর্টিসানেই নিহত হন।
গুলশানের হলি আর্টিসানে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ নিহত পাঁচ হামলাকারী হলেন- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’অভিযানে নিহত আটজন হলেন- তামীম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তখন তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরে অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হন। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করে পুলিশ।
জেএ/এনডিএস/এমএস