প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা : আপিল শুনানি প্রতি বৃহস্পতিবার
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) ও আপিল শুনানি শুরু হয়েছে আজ। আজ শুনানি শেষে মামলার কাযর্ক্রম আগামী বৃহস্পতিবার পযর্ন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে মামলাটি আবার প্রথম থেকে শুনানি শুরু হয়েছে। এর আগে হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চে মামলাটি শুনানির কথা ছিল। ওই বেঞ্চে শুনানি শেষ না করে প্রধান বিচারপতি হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন করায় মামলাটি আবারও নতুন বেঞ্চে শুনানি হচ্ছে।
এর আগে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চে এ মামলার শুনানি হয়। সে সময় মামলায় যুক্তিতর্ক পর্যন্ত পৌঁছে যান আইনজীবীরা। পরে সুপ্রিম কোর্টের শীতকালীন ছুটির পর নতুন করে বেঞ্চ পুনর্গঠন করেন প্রধান বিচারপতি। তখন বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের জায়গায় বিচারপতি রিয়াজ উদ্দিন খানকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। এ কারণে মামলাটি নতুন করে শুনানি শুরু হয়।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরোয়ার কাজল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শাহিন মৃধা মামলার রায়ের অংশ থেকে পাঠ শুরু করেন। এ সময় আসামিরপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক।
পরে ডিএজি কাজল সাংবাদিকদের জানান, প্রতি সপ্তাহের বৃহ্স্পতিবার এ মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলবে। এর আগে আমরা মামলায় যুক্ততর্ক পর্যন্ত গিয়েছিলাম। কিন্তু বেঞ্চটি পুনর্গঠন হওয়ায় ফের নতুন করে শুরু করতে হয়েছে।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মমতাজ বেগম ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। এছাড়া চার আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ মামলার রায়সহ সব নথি ওই বছরের ২৪ আগস্ট হাইকোর্টে আসে।
এরপর প্রধান বিচারপতির কাছে নথি উপস্থাপন করা হলে তিনি জরুরি ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেন। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে পেপারবুক তৈরি করা হয়। এরপর মামলাটি শুনানির জন্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন।
এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ওয়াসিম আকতার, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম, ইউসুফ ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বক্কর, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর।
এছাড়া মেহেদি হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। আনিসুল ওরফে আনিস, মো. মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান এবং সরোয়ার হোসেন মিয়াকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের দণ্ড দেয়া হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশের একটি চায়ের দোকানের পেছনে এ বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় তৎকালীন কোটালীপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নূর হোসেন মামলা দায়ের করেন।
পরে ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালের ২৯ জুন আরও নয়জনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। এরপর ২০১০ সালে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা-২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়। সেখানে এ মামলার বিচার সম্পন্ন হয়।
এফএইচ/বিএ