খালেদা জিয়ার পায়ে ফোঁড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:২৬ পিএম, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯
ফাইল ছবি

>> অভিযোগ গঠন শুনানি ২৪ জানুয়ারি
>> সকল আসামির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক

দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পায়ে ফোঁড়া উঠেছে। যার ফলে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে আজ (১৬ জানুয়ারি, বুধবার) আদালতে হাজির করতে পারেনি কারা কর্তৃপক্ষ।

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদাকে আজ (বুধবার) আদালতে হাজির করার দিন ধার্য ছিল। তবে তাকে আদালতে হাজির না করে আদালতে কাস্টরি ওয়ারেন্ট পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ। যেখানে উল্লেখ করা হয়, খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাই তাকে আদালতে উপস্থিত করানো যায়নি।

আদালতের শুনানিতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, খালেদা জিয়ার পায়ে ফোঁড়া ওঠায় তাকে আদালতে আনা সম্ভব হয়নি। তাই কারা কর্তৃপক্ষ কাস্টরি ওয়ারেন্ট পাঠিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলাটির অভিযোগ গঠন শুনানি করা যেতে পারে। তার কারণে মামলাটির অভিযোগ গঠন শুনানি হচ্ছে না।

অপরদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, আমরা জানতে পেরেছি খালেদা জিয়া অসুস্থ। তার অনুপস্থিতিতে মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির কোনো সুযোগ নেই।

আসামি পক্ষের আরেক আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, আসামির (খালেদা জিয়া) অনুপস্থিতিতে মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির কোনো সুযোগ নেই।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক দিলদার হোসেন বলেন, হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়েছে মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার।২৪ জানুয়ারি মামলাটির অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হলো। ঐ দিন সকল আসামির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।

এর আগে ১০ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করার জন্য প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট (হাজিরা পরোয়ানা) জারি করেন পুরান ঢাকার আলিয়া মাদরাসা মাঠে অবস্থিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু সৈয়দ দিলদার। ওই দিন মামলার অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য ছিল। তবে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা সময়ের আবেদন করেন। অপরদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সময় আবেদনের বিরোধীতা করেন।

আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে খালেদাকে কারাগার থেকে আদালতে জারি করার জন্য প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেন এবং মামলাটির চার্জ গঠনের জন্য ১৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।

২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী সাবেক চার দলীয় জোট সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় এ মামলা করেন। মামলার পরদিন খালেদা জিয়া ও কোকোকে গ্রেফতার করা হয়।

ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয় জরুরি ক্ষমতা আইনে। পরের বছর ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন।

পরে মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনে অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া ও আরাফাত রহমান কোকো। এর তিনদিন পর খালেদা ও কোকোর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করা কেন ‘বেআইনি ও কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না -তা জানতে চাওয়া হয়। তবে হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশ পরে আপিল বিভাগে বাতিল হয়ে যায়।

দুদক আইনে গ্যাটকো মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৮ সালে আরেকটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। তার আবেদনে হাইকোর্ট আবারও মামলার কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ দেন এবং মামলাটি কেন বাতিলের নির্দেশ দেয়া হবে না -এ মর্মে রুল জারি করেন।

মামলার ২৪ আসামির মধ্যে ছয়জন মারা গেছেন। তারা হলেন- সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভূইয়া, এমকে আনোয়ার, জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, বন্দরের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা আহমেদ আবুল কাশেম ও বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো।

অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপি দলীয় সাবেক মন্ত্রী এম শামছুল ইসলাম, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আলী, প্রয়াত মন্ত্রী কর্নেল আকবর হোসেনের (অব.) স্ত্রী জাহানারা আকবর, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন এবং একেএম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, সাবেক নৌ সচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক সদস্য একে রশিদ উদ্দিন আহমেদ এবং গ্লোবাল এগ্রোট্রেড প্রাইভেট লি. (গ্যাটকো) এর পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, গ্লোবাল এগ্রোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড (গ্যাটকো) এর পরিচালক সৈয়দ তানভির আহমেদ ও সৈয়দ গালিব আহমেদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এএসএম শাহাদত হোসেন, বন্দরের সাবেক পরিচালক (পরিবহন) এএম সানোয়ার হোসেন ও বন্দরের সাবেক সদস্য লুৎফুল কবীর।

উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুদকের দায়ের করা দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। আপিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড বেড়ে ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি।

গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়া বন্দি রয়েছেন।

জেএ/আরএস/এমকেএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।