জামায়াতের প্রার্থিতা নিয়ে ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামীকে যেহেতু প্রার্থিতা অনুমোদন ও প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে, সেহেতু এ পর্যায়ে এসে আইনগতভাবে তাদের প্রার্থিতা বাতিলের কোনো সুযোগ নেই বলে নির্বাচন কমিশন (ইসির) এমন সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর পক্ষে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর এই রিট আবেদন করেছেন। আইনজীবী নিজেই বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
এর পর রিট আবেদনের বিষয়ে শুনানির জন্য উপস্থাপন করার পর হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শুনানির দিন ঠিক করে আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুর্টি অ্যার্টনি জেনারেল মো. মোতাহার হোসেন সাজু। নির্বাচন কমিশন (ইসির) পক্ষে ছিলেন ড. ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ইয়াসীন খান। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার শানজানা ইয়াসীন খান।
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর জাগো নিউজকে বলেন, নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতের ইসলামীর প্রার্থিতা আইনগতভাবে বাতিলের সুযোগ নেই বলে নির্বাচন কমিশন যে চিঠি দিয়েছে সেই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ কের রিট দায়ের করেছি। এ বিষয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। রিটরে বিষয়ে শুনানির জন্য (বৃহস্পতিবারের কজ লিস্ট) কার্যতালিকায় থাকবে।
এর আগে একই ব্যক্তির করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেয়া এক আদেশের পর গত ২৩ ডিসেম্বর (রোববার) রাতে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামীর ২৫ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। যেহেতু নির্বাচন কমিশন তাদের প্রার্থিতা অনুমোদনসহ প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে, সেহেতু এ পর্যায়ে এসে আইনগতভাবে তাদের প্রার্থিতা বাতিলের কোনো সুযোগ নেই।
এর আগে ১৭ ডিসেম্বর (সোমবার) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ২৫ প্রার্থীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী একটি রিট দায়ের করেন।
পরে ১৮ ডিসেম্বর বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে রিট শুনানি শেষে রুল জারি করে আদেশ দেন। আদেশে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিবসহ চারজনের আবেদন তিনদিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
২০০৮ সালে তরিকত ফেডারেশনের দায়ের করা এক রিট মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন (২০১৩ সালের ১ আগস্ট) অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন।
এর বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী আপিল করলেও তারা এর শুনানি করেননি। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অন্য দলের প্রতীক ও স্বতন্ত্র হয়ে তারা নির্বাচন করছেন। আইনের প্রতিষ্ঠিত রীতি যা প্রত্যক্ষভাবে করা যায় না, তা পরোক্ষভাবেও করা যায় না। এসব যুক্তিতে রিটটি করা হলে আদালত রুলসহ ইসির প্রতি ওই নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
জামায়াতের প্রাথীরা হলেন- ঢাকা-১৫ আসনে ডা. শফিকুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৪ রফিকুল ইসলাম খান, খুলনা-৬ আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা-১১ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, খুলনা-৫ মিয়া গোলাম পারোয়ার, পাবনা-৩ আনোয়ারুল ইসলাম, পাবনা-৫ ইকবাল হোসাইন, যশোর-২ আবু সাঈদ মো. শাহাদাত হোসাইন, ঠাকুরগাঁও-২ আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ আবু হানিফ, দিনাজপুর-৬ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-৩ আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, নীলফামারী-২ মো. মনিরুজ্জামান, ঝিনাইদহ-৩ মতিয়ার রহমান, বাগেরহাট-৩ ওয়াদুল শেখ, বাগেরহাট-৪ আব্দুল আলীম ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনে শামসুল ইসলাম।
জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদ কক্সাবাজার-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে বিএনপি অন্য কোনো প্রার্থী দেয়নি। এ ছাড়া জামায়াতের নূরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, জহিরুল ইসলাম চট্টগ্রাম-১৬ এবং ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান পাবনা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
এফএইচ/আরএস/এসএইচএস/এমকেএইচ/এমএস/জেআইএম