জামায়াত প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে রিট
ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সকল প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। এ বিষয়ে দায়ের করা রিটের ওপর প্রথম দিনের শুনানি শেষে আরো শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করেন আদালত।
সোমবার বিকেলে প্রথম দিনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আজ শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে সোমবার তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট করেন অ্যাডভোকেট আদনান।
জামায়াতের ইসলামীর আমির, সেক্রেটারি জেনারেল, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশনার সচিবসহ ২৫ জনকে রিটের বিবাদী করা হয়েছে।
রিটে জামায়াতের সকল নেতারে প্রার্থিতা স্থগিত ও বাতিল চাওয়া হয়েছে। সঙ্গে কেন তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
এরপর সোমবার বিকেল ৪টায় হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৪০ মিনিট শুনানি শেষে আদালত আগামীকাল মঙ্গলবার পরবর্তী শুনানির সময় ধার্য করেন।
রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন নেই। নিবন্ধনহীন একটি দলের প্রার্থীরা কীভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হন- এ যুক্তিতে রিটটি দায়ের করা হয়েছে। এদিনের শুনানিতে কেবল তানিয়া আমীরই তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। প্রথম দিনের শুনানি শেষ করার পরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলেননি।
প্রসঙ্গত তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর দায়ের করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর নির্বাচন কমিশন থেকে দলের নিবন্ধন বাতিল বলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই জোটের শরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসনে জামায়াতকে ছাড় দিয়েছে বিএনপি। ২০ দলীয় শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে ২২টি আসন দেয়া হয়েছে। যদিও জামায়াতকে আসন বণ্টনের শুরুতে ২৫টি আসনে ছাড় দেয়ার কথা ছিল। এ নিয়ে জামায়াতে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো জামায়াত এবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট করে দুটি আসনে জয়ী হয়। আর জোটের সিদ্ধান্তে দশম নির্বাচন বয়কট করে দলটি।
জামায়াতের ২২ আসন : জামায়াত নেতাদের মধ্যে চিঠি পেয়েছেন- দিনাজপুর-১ মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৬ মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান সরকার, সিরাজগঞ্জ-৪ মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-৫ মাওলানা ইকবাল হুসাইন, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ অধ্যাপক আবদুল আলীম, খুলনা-৫ অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, ঢাকা-১৫ ডা. শফিকুর রহমান, সিলেট-৬ মাওলানা হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১ ডা. আবদুল্লাহ মো. তাহের, চট্টগ্রাম-১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম ও কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আযাদ।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব মাওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে এক রিট পিটিশন দায়ের করেন। কয়েক দফা শুনানির পর হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট এক রায়ে, জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন প্রদান আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও আইনগত অকার্যকর ঘোষণা করা হয়। পরে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর আওতায় রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছিল। দলটির নিবন্ধন নম্বর ছিল ১৪।
এরআগে, গত ২৯ অক্টোবর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি সংগ্রহ করে ইসির আইন শাখা। ওই রায়ের ভিত্তিতেই জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করার অনুমোদন চেয়ে কমিশনে ফাইল তোলা হয়। এরপরই তা অনুমোদন করে গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারি মুদ্রণালয়ে পাঠানো হয়।
ইসির প্রজ্ঞাপনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে বলা হয়, হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নম্বর ৬৩০/২০০৯ এর প্রদত্ত রায়ে আদালত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৯০ (এইচ) এর উপধারা ৪ অনুযায়ী নিবন্ধন বাতিল করা হলো।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন পেয়েছিল। নিবন্ধন নম্বর-১৪। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করেন তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ জন ব্যক্তি।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করেন। এরপর ২০১৩ সালের বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
তবে তখন থেকে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি নির্বাচন কমিশন। এরপর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই আপিল করেছিল জামায়াত। ওই আবেদনের বিষয়টি এখন পর্যন্ত সুরাহা হয়নি।
এফএইচ/এমএআর/আরআইপি/এমএস