মুঠোফোনে কলরেট বাড়ানো ও কলড্রপের ওপর নিষেধাজ্ঞা
ভবিষ্যতে মোবাইল অপারেটরগুলোর কলরেট বাড়ানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দেশের ছয়টি মোবাইল অপারেটরের বিরক্তিকর কলড্রপে চার্জ নেওয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
এর সঙ্গে মোবাইল ফোন গ্রাহকদের অধিকার সুরক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হইকোর্ট। মোবাইল গ্রাহকদের অধিকার সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, কলড্রপ-অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষুদেবার্তা-বর্ধিত কলরেট-ট্যারিফ চার্জ না বাড়াতে এবং ঘোষিত ফোরজি সেবা নিশ্চিত করার কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
এছাড়াও বিদ্যমান কলরেট পর্যালোচনা করতে একটি কমিটি গঠনের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও সচিবকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে টেলিযোগাযোগ সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, সচিব, মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন লিমিটেড, এয়ারটেল লিমিটেড, রবি আজিয়াটা লিমিটেড, বাংলালিংক লিমিটেড ও টেলিটক কর্তৃপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর সমন্বয়ে বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম।
রিটকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ‘আদালত রুলসহ মোবাইল কলচার্জ বৃদ্ধি ও কলড্রপে চার্জ কাটায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। প্রত্যেক বিবাদীকে নিয়মিতভাবে এসব বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন আদালত।’
রিটকারী মেহেদী হাসান ডালিম জানান, ‘পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় শুরু থেকেই আমরা মোবাইল কলরেট বেশি দিয়ে আসছি। এর মধ্যেই গ্রাহকদের মতামত না নিয়ে শুধুমাত্র মুনাফা করতে গত আগস্টে কলরেট আরেক দফা বাড়িয়েছে। এটা ভোক্তা অধিকারের লঙ্ঘন। এছাড়াও, কলড্রপ বিড়ম্বনা, অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষুদে বার্তার যন্ত্রণা তো আছেই। সবমিলিয়ে দেশের মোবাইল গ্রাহকরা এসব অপারেটরগুলো থেকে সেবা পাওয়ার পরিবর্তে নানাভাবে ঠকছেন কিংবা যন্ত্রণা-হয়রানি এবং আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এই বিবেচনা থেকেই জনস্বার্থে আমিসহ কয়েকজন মিলে রিট আবেদনটি করেছি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার জনস্বার্থে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করা হয়।’
মেহেদী হাসান ডালিম ছাড়াও রিট আবেদনকারী অন্যরা হলেন- আইন সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোটার্স ফোরামের সদস্য এম. বদিউজ্জামান, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমদ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশিদুল হাসান।
রিট আবেদনে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) একটি প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৩ মাসে ২২২ কোটি বার কলড্রপ করেছে মোবাইল অপারেটরগুলো।
এর মধ্যে গ্রাহক সংখ্যায় শীর্ষে থাকা গ্রামীণফোন কলড্রপের ক্ষেত্রেও শীর্ষে অবস্থান করছে। ১৩ মাসে এ অপারেটরের কল ড্রপ হয়েছে ১০৩ কোটি ৪৩ লাখ বার। গ্রাহক সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রবির কলড্রপ হয়েছে ৭৬ কোটি ১৮ লাখ বার।
ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্রামীণফোন ও রবির পর সবচেয়ে বেশি কলড্রপ হয়েছে বাংলালিংকের; ৩৬ কোটি ৫৪ লাখ আর টেলিটকের আনুমানিক ৬ কোটি বার।
২০১৪ সালে কয়েকটি অপারেটর কলড্রপের বিপরীতে গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু করে। এ নিয়ে তারা প্রচারও চালায়। কিন্তু কিছুদিন পর কোনো ঘোষণা ছাড়াই ক্ষতিপূরণ বন্ধ করে দেয় অপারেটরগুলো।
এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এমনকি সরকারের একাধিক মন্ত্রীও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে অপারেটরগুলোর কাছ থেকে কলড্রপের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
আইনজীবী ইশরাত জানান, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে কলড্রপের জন্য গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা অপারেটরগুলোর। কিন্তু অপারেটরদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ ডিসেম্বর বিবাদীদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। নির্ধারিত সময়ে নোটিশের জবাব না দেয়ায় এবং তোয়াক্কা না করে মোবাইল কলচার্জ বৃদ্ধি, কলড্রপে ক্ষতিপূরণ না দেওয়া এবং বিরক্তিকর ক্ষুদেবার্তা প্রেরণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করা হয়।
এফএইচ/এসএইচএস/পিআর