মুন সিনেমা হলকে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধে সময় বাড়ল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:২৫ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮

পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাট এলাকার আলোচিত মুন সিনেমা হলের মালিককে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছেন সুপ্রিম কোটের আপিল বিভাগ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে এ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে টাকা না দিলে অর্থ সচিব ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিবকে হাজির থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অপরদিকে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।

গত ৮ অক্টোবর মুন সিনেমা হলের মালিককে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের যে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ তা পরিশোধে সম্মত হওয়ার কথা জানান অর্থ মন্ত্রনালয়। অর্থ পরিশোধে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। এর আগে গত ১২ জানুয়ারিতেও একই রকম আদেশ দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত।

মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে মামলার পর সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়েছিল। সেই সিনেমা হলের জমি এবং তার ওপর গড়ে তোলা বর্তমান স্থাপনার নির্ধারিত মূল্য পরিশোধের নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

গত বছরের ১৫ জানুয়ারি মুন সিনেমা হলের জমি এবং তার ওপর গড়ে তোলা বর্তমান স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে একজন ‘অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ’ প্রকৌশলীকে দিয়ে সিনেমা হলের জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় মূল্য নির্ধারণ করে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর দেওয়া প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করলে মূল্য পরিশোধের এ আদেশ দেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে এক সময়ের মুন সিনেমা হলের মূল মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করা হয় এবং পরে শিল্প মন্ত্রণালয় ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করে। ইটালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করলেও বিষয়টি আটকে যায়।

এরপর ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান একটি সামরিক ফরমান ঘোষণা করেন। এতে বলা হয়, সরকার কোনো সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে আদালতে তা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। মুন সিনেমা হলের সম্পত্তিও এর আওতায় পড়ে। কিন্তু ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস এরপর ২০০০ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে, যেখানে সংবিধানের ওই পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করা হয়।

২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট এক ঐতিহাসিক রায় দেন। রায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মোশতাক আহমদ, বিচারপতি আবু সাদাতমোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ সংবিধান-বহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায় বহাল রাখেন এবং ৯০ দিনের মধ্যে মুন সিনেমা হল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টসহ সরকারের সংশ্নিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন। এরপর দীর্ঘদিনেও মালিকানা ফিরে না পেয়ে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইটালিয়ান মার্বেল কর্তৃপক্ষ তখনকার ভূমি সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করে। সেই অভিযোগের শুনানি করেই আপিল বিভাগ সিনেমা হলের জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দেন।

এফএইচ/আরএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।