দেশে সকল পর্নো সাইট ব্লক করার নির্দেশ
দেশে সকল পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট ছয় মাসের জন্য ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব; তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব; আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব; বিটিআরসি; গ্রামীণফোন; বাংলালিংক; এয়ারটেল; রবিসহ সংশ্লিষ্ট পাঁচটি মোবাইল অপারেটরকে এই আদেশ পালন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আদালতে আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব।
জনস্বার্থে করা এক রিটের শুনানি নিয়ে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট হাসান তারেক, ব্যারিস্টার মোজাম্মেল হক ও ব্যারিস্টার মাজেদুল কাদের।
হুমায়ুন কবির জানান, ছয় মাসের জন্য পর্নোগ্রাফিযুক্ত সকল ওয়েবসাইট বন্ধ (ব্লক) রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ ছাড়াও পর্নোগ্রাফিযুক্ত সকল ওয়েবসাইট স্থায়ীভাবে কেন বন্ধের নির্দেশ দেয়া হবেনা, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, ফেসবুক এবং সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার জন্য ১৮ বছর বয়স নির্ধারণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর (আইডি) সংযুক্তি করার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না এবং মোবাইল অপারেটরগুলোর পক্ষ থেকে ইন্টারনেটের স্বল্প মেয়াদি ইন্টারনেটের লোভনীয় অফার বন্ধে কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
পর্নোগ্রাফি বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন এ আদেশ দেন। শুনানিকালে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র এক গবেষণা প্রতিবেদনে আদালতে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজধানীতে ৭৭ শতাংশ স্কুলগামী শিক্ষার্থী পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে।
এ সময় আদালত বলেন, এটা শুধু শিশুদের জন্য নয়, এর দ্বারা সমাজের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত। এটি নতুন একটি বিষয়। তাই এটিকে জাতির স্বার্থে গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
পরে আদালত থেকে বেরিয়ে আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব জাগো নিউজকে বলেন, ইন্টারনেটে প্রবেশ সহজলভ্য হওয়ায় আমাদের যুব সমাজ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা এর দ্বারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং তারা স্কুলে পড়াশোনা বাদ দিয়ে পর্নোগ্রাফি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। যা জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে। এছাড়াও পর্নোগ্রাফির ফলে ধর্ষণসহ বিভিন্ন যৌন অপরাধে তারা উদ্বুদ্ধ হয়। তাই এসব ওয়েবসাইট বন্ধ হওয়া অত্যন্ত জরুরি হওয়ায় আমরা রিট করি। রিটের শুনানিতে আমরা আদালতকে জানাই, ইতোমধ্যে ভারতে ৮৫৭টি পর্নো ওয়েবসাইট বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই দেশের মোবাইল অপারেটরগুলোও পর্নো মুক্ত। আদালত আমাদের বক্তব্য শুনে রুলসহ আদেশ দিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে আজকের আদেশ যুগান্তকারী হয়ে থাকবে।
এর আগে গত ১১ নভেম্বর মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন, চাঁদপুরের বাসিন্দা মো. রাসেল হোসেন এবং ময়মনসিংহের খায়রুল হাসান সরকারের পক্ষে দেশের সকল পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। দায়ের করা রিটে ‘প্রযুক্তিতে আসক্ত শিশু-কিশোর’ এবং ‘ডিজিটাল কোকেন’-এ সর্বনাশ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন আদালত।
এফএইচ/এমবিআর/ জেএইচ/এমএস