সিকিউরিটির মানে কি আমাকে ঘিরে রাখা : খালেদা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৫৬ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০১৮
ফাইল ছবি

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, পুলিশ সিকিউরিটির মানে কি আমাকে ঘিরে রাখা। এভাবে ঘিরে থাকলে আমি আইনজীবীদের দেখতে পাই না। তাদের সঙ্গে কথা বলতেও পারি না। পুলিশ তো আদালতের বাইরে থাকবে।

নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য বুধবার (১৪ নভেম্বর) বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৯নং বিশেষ জজ মাহমুদুল কবিরের আদালতে খালেদা জিয়াকে হাজির করা হয়। হুইল চেয়ারে বসে তিনি আদালতে আসেন। এ কারাগারেই দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বন্দী রয়েছেন খালেদা জিয়া। আদালতে হাজির করার পর তিনি এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়া আদালতের পরিবেশের কথা প্রশ্ন তুলে বিচারককে বলেন, এই ছোট্ট পরিসরের আদালতে কীভাবে আপনি (বিচারক) এ মামলার বিচার করবেন। আগের আদালতে বিচার করুন।

এ সময় বিচারক বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে আমি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারব না। তবে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে প্রসিকিউটরকে বলছি।

খালেদা জিয়া শুনানি চলাকালে আরও বলেন, ‘মামলা দিয়ে কোর্টের মাধ্যমে আমাদের আটকে রাখা হচ্ছে। তাহলে বলে দেয়া হোক যে, আমাদের নির্বাচনে যাওয়ার দরকার নেই।’

তিনি বলেন, ‘একদিকে মামলা চলবে, অন্যদিকে তারা (ক্ষমতাসীন দল) নির্বাচন করবে- এটা তো হতে পারে না।’
শুনানিতে অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন প্রশ্ন রাখেন, ‘আমার মামলাগুলো কেন এত দ্রুত বিচার করা হচ্ছে? কয়টা মামলা দ্রুত বিচারে নিষ্পত্তি করা হয়েছে? সেভেন মার্ডার (নারায়ণগঞ্জের সাত খুন) কি দ্রুত বিচার আইনে হয়েছে?’

‘বর্তমান রাজনীতির সঙ্গে সবকিছু চলছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

খালেদা জিয়া নির্বাচনের পর অভিযোগ গঠনের পরবর্তী শুনানির জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আমার নেতাকর্মীরা ব্যস্ত থাকবেন। কেউ আসতে পারবেন না। এ কারণে নির্বাচনের পর শুনানির দিন ধার্য করা হোক।’

খালেদা জিয়ার বক্তব্য শেষে আদালত ৩ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। দুপুর সোয়া ১টায় বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘জেল খানার ভিতরে আদালত বসিয়ে মামলা পরিচালনা করা ঠিক না। এটা তো হাই সিকিউরিটি মামলা নয়। আমাদের দেশে আইনের শাসন বিলুপ্তির পথে। এর চেয়ে ভালো আমাদের ফাঁসি দেন। এভাবে কোনো বিচার কাজ চলতে পারে না।’

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘মামলাটি দীর্ঘ দিন ধরে অভিযোগ গঠন শুনানি চলছে। মওদুদ সাহেব বার বার সময় নিচ্ছেন।’

মামলা সূত্রে জানা যায়, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন।

মামলার পরের বছর ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক এমপি এম এ এইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুদকের দায়ের করা দুই মামলায় ১০ ও সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত। আপিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড বেড়ে ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতে সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে বন্দী রাখা হয়। সেখান থেকেই গত ৬ অক্টোবর চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নেয়া হয়। টানা এক মাস ২ দিন বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসা নেয়ার পর ৮ নভেম্বর তাকে কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়।

জেএ/এএইচ /এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।