মইনুল জেলে কেন, প্রশ্ন ড. কামালের
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে কেন জেলে পাঠানো হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা, সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আইনমন্ত্রীর কাছে এই প্রশ্ন রাখেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমার বক্তব্য দেয়ার আগেই আমি তীব্র নিন্দা জানাই, ‘ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই ঘনটাকে কেন্দ্র করে তিনি এখান থেকে বেল (জামিন) নিয়ে গেছেন। সিলেটে শুনে আমি অবাক হয়েছি, তাকে সন্ধ্যায় নেয়া হয়েছে, পরে তাকে অন্তরীণ করা হয়েছে। ঢাকায় এসে দেখি, সে এখনও মুক্ত হয়নি। এটা কী শুরু করেছে।’
সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম এই সদস্য ও আইনজ্ঞ বলেন, ‘কী আশ্চর্য, মইনুল হোসেন আইনজীবী। এই সরকার খুব ভালোভাবে তাকে চেনেন। কালকে রাতে সিলেটে শুনে আমি অবাক। ওনাকে জেলে নেয়া হয়েছে। এখানে এসে দেখি ওনি এখনও জেলে। তিনি কেন জেলে? কেন কেন কেন? এর উত্তর চাই।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এ সরকারের নাকি তথাকথিত একটা আইনমন্ত্রী আছে। তোমার কাছে আমি উত্তর চাই। তুমি আমাদের একজন জুনিয়র ল’ইয়ার। তোমার বাবা আমার সহকর্মী ছিলেন। সিরাজুল হক বাচ্চু ভাই। ওনি আইনজীবী ছিলেন। তুমি কী হয়ে গেছো। তুমি আইন সব ভুলে গেছো। এসো তোমার সঙ্গে আমরা আইনের বই দেখবো। কোন গ্রাউণ্ডে মইনুল হোসেনকে কারাগারে নেয়া হয়েছে। কৈফিয়ত চাই। গণতন্ত্র যখন দাবি করো, জনগণকে কৈফিয়ত দিতে হবে। দায়িত্ব আছে তোমার। বলতে হবে তোমার।’
তিনি বলেন, ‘চরম স্বৈরতন্ত্রের পরিচয় দিয়েছে। এটা গণতন্ত্র নয়। বোঝাও তুমি, গণতন্ত্র মানে যা ইচ্ছা তা নয়। সংবিধানের এমন ক্ষমতা কাউকে দেয়া হয়নি। যে যা ইচ্ছা তা করতে পারবে। মইনুলকে অপমান করে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে? কী অপরাধ করেছে সে? এটা মানহানির মামলা। মানহানির মামলায় তো সে জামিন নিয়েছে। আর কত মামলা করবে। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে বলছি, কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী বলতে পারে না যে, সবাই মামলা করো। মামলা করো। আইনমন্ত্রী তুমি যার চাকরি করছো তাকে বোঝাও। এভাবে কথা বলা যায় না। তাকে বোঝানোর ক্ষমতা না থাকলে আমরা সাহায্য করবো। বই খুলে চোখে আঙুল দিয়ে তোমাকে দেখাবো। স্বাধীনতার ৪৭ বছরে এসে এসব দেখতে হচ্ছে। আমি মনে করি, এটা আমার জন্য বড় শাস্তি। এটা আমাকে দেখতে হচ্ছে, শুনতে হচ্ছে। আমার এক বন্ধু সিনিয়র আইনজীবী আমাকে বলছে, আওয়ামী লীগের নামে যা হচ্ছে তাতে কি বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে?’
তিনি বলেন, ‘আইনমন্ত্রী তুমি মনে হয় সব ভুলে বসেছো। তুমি শপথ নিয়েছো সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনার। তুমি যার চাকরি করছো তিনিও শপথ নিয়েছেন। তোমাদের শপথের প্রত্যেকটা শব্দের ব্যাখ্যা আমাকের বোঝাও।’
‘যেসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে তা সংবিধানের কোথায় আছে? আমি সিলেটে যা দেখেছি অবাক কাণ্ড। আমাদের হোটেলের সামনে থেকে ৮টা ১০টা করে ছেলে ধরে নিয়ে গেছে। কেন নিয়ে গেছে? কী শুরু হয়েছে এটা, বাংলাদেশে?’, বলেন তিনি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আইনমন্ত্রী আমাকে তুমি বোঝাও। আমি তোমার কাছে সময় চাই। আমাকে বোঝাও হচ্ছেটা কী দেশে। পার্লামেন্ট নাকি আছে। তথাকথিত একটা পার্লামেন্ট নাকি আছে। সেখানে দাঁড়িয়ে তোমরা কৈফিয়ত দাও। আরও দুই দিন পার্লামেন্ট আছে। সেখানে দাঁড়িয়ে তুমি কৈফিয়ত দাও।’
উল্লেখ্য, রংপুরের মানহানির মামলায় গ্রেফতার সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর গত ২৩ অক্টোবর তাকে কেরানীগঞ্জের কারাগারে পাঠানো হয়।
২২ অক্টোবর (সোমবার) রাতে আ স ম আবদুর রবের বাসা থেকে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখান থেকেই তাকে ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে নেয়া হয়। ঢাকা মহানগর হাকিম (এসিএমএম) কায়সারুল ইসলামের আদালতে মইনুলের জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। কিন্তু জামিন মঞ্জুর হয়নি।
গত ১৬ অক্টোবর একাত্তর টেলিভিশনের একটি টক শোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির এক প্রশ্নে রেগে গিয়ে মইনুল হোসেন বলেন, ‘আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই। আমার সঙ্গে জামায়াতের কানেকশনের কোনো প্রশ্নই নেই। আপনি যে প্রশ্ন করেছেন তা আমার জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর।’
মইনুলের এ ধরনের বাক্য ব্যবহারে সমালোচনা শুরু হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় মানহানির মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে কয়েকটিতে তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।
এফএইচ/জেডএ/জেআইএম