ধলেশ্বরী দখল করে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, বাধা না দেয়ায় রুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৫৫ পিএম, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীর জায়গা দখল করে ডরিন পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিবাদীদের বাধা না দেয়ার নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে, মানিকগঞ্জে ধলেশ্বরী নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ, অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীকে সিএস/আরএস রেকর্ড অনুযায়ী তার মূল সীমানা রক্ষার জন্য বিবাদীদের জবাব চাওয়া হয়েছে।

আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সচিব, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও মানিকগঞ্জের ডিসিসহ সংশ্লিষ্ট ১৩ বিবাদীকে এসব রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষ মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক।

শুনানিতে মনজিল মোরসেদ জানান, নদীর জায়গা দখল করে কোনো প্রজেক্ট তৈরি বিদ্যমান আইন এবং আদালতের রায়ের অবমাননা। কাজেই মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী দখল করে সেখানে ডরিন পাওয়ারের কর্মকাণ্ড অবৈধ।

গত ১৪ জুলাই ধলেশ্বরী দখল করে ডরিন পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্র শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে সংবাদটি সংযুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশে (এইচআরপিবি) হাইকোর্টে রিট দায়ের করে। গত ২১ অক্টোবর এই রিট দায়ের হয়। রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার আদালত এই আদেশ দেন।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ধলেশ্বরী নদীর একটি অংশ এরই মধ্যে ভরাট করেছে ডরিন পাওয়ার। উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের ফোর্ডনগর গ্রামে ধলেশ্বরীর ওই অংশ দখল করে চলছে প্রতিষ্ঠানটির ১৬২ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ। কেন্দ্রটি নির্মাণে পরিবেশ ছাড়পত্রও নেয়নি ডরিন পাওয়ার।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ফোর্ডনগর গ্রামের ৬৭২ মৌজায় প্রায় সাড়ে ১১ একর জমি বালি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে, যা নদীর সীমানা নির্ধারণী ভাষাশহীদ রফিক সেতু থেকে প্রায় ২০০ মিটারের মধ্যে। শুধু নদী দখল নয়, ফোর্ডনগর গ্রামের পানি নিষ্কাশনের জন্য যে কালভার্ট, তাও ভরাট করা হয়েছে বালি ফেলে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে যাচ্ছে নদীরক্ষা বাঁধের ভেতরের ঘরবাড়ি।

নদী দখল বন্ধে ও সরকারি জমি রক্ষায় গত ৪ জুন জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ করে ওই গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার। স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ জুন সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করে নদী কমিশন। সরেজমিন নদী দখলের দৃশ্য দেখে প্রকল্প বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশও দেয় নদীরক্ষা কমিশন।

প্রকল্পটির জন্য পরিবেশ অধিদফতর থেকে কোনো ছাড়পত্রও নেয়নি ডরিন পাওয়ার। ছাড়পত্রের জন্য কোনো আবেদন তারা পাননি বলে নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (পরিবেশগত ছাড়পত্র) সৈয়দ নাজমুল আহসান।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় ১৬২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে প্রস্তাব দেয় ডরিন পাওয়ার। গত বছরের নভেম্বরে কোনো দরপত্র আহ্বান ছাড়াই দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ আইনে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। মানিকগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড নামে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ডরিন পাওয়ার নির্মাণ করলেও এ প্রকল্পের অংশীদার হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয় রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এফএইচ/এমএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।