ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিল চেয়ে রিট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ‘ঘ’ইউনিটের ১ম বর্ষ সম্মান শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা অবৈধ ও বাতিল করে পুনরায় গ্রহণের নিদেশনা চেয়ে হাইকোটে রিট করা হয়েছে। হাইকোটের সংশ্লিষ্ট শাখায় রোববার আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ এ রিট করেন।
রিট আবেদনে, ২০১৮-১৯ সেশনের ঢাবির ‘ঘ’ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজিও জানানো হয়।
এর আগে গত ১৮ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষার ফল বাতিল এবং ঢাবি উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান ইউনুছ আলী আকন্দ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব ও ঢাবি উপাচার্যের প্রতি এ নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু সে নোটিশের জবাব না পাওয়ায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
ওই নোটিশে বলা হয়েছিল, পত্রিকার মাধ্যমে জানা গেল যে, প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কম মেধাবীদের পাস করানো হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত হলে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার তথ্য প্রমাণিত হয়, এ জন্য প্রথমে রেজাল্ট স্থগিত রাখা হয়। পরে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু যে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রশ্নফাঁস হয়েছে আপনারা (শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব ও ঢাবি উপাচার্য) সেই প্রশ্নের দ্বারাই ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ভিসির বিষয়ে নোটিশে বলা হয়, আপনি দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দলীয় লোকদের পাস দেখিয়েছেন। আপনি আইন অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত নন।
গত ১২ অক্টোবর শুক্রবার ‘ঘ’ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শুরুর পৌনে এক ঘণ্টা আগে হাতে লেখা প্রশ্ন ফাঁস হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। হাতে লেখা প্রশ্নের বাংলায় ১৯টি, ইংরেজিতে ১৭টি, সাধারণ জ্ঞান ৩৬টি (বাংলাদেশ ১৬, আন্তর্জাতিক ২০) মোট ৭২টি প্রশ্ন হুবহু মিলে যায়।
তাৎক্ষণিক সহকারী প্রক্টর সোহেল রানা বলেন, পরীক্ষার আগে প্রশ্নগুলো বের হলে সেটি ফাঁস হওয়া বলা যেতে পারে। কিন্তু পরীক্ষা চলাকালে বের হলে সেটাকে প্রশ্ন ফাঁস বলা যাবে না। আমার মনে হয় কেউ পরীক্ষার হল থেকে ছবি তুলে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। এ চক্রকে আমরা ধরার চেষ্টা করছি। আর এটি হয়তো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ক্যাম্পাসের বাইরে কেন্দ্র বেশি হওয়ায়। এ সমস্যাগুলো ক্যাম্পাসের বাইরের কেন্দ্রগুলোতে হয়ে থাকে।
এ ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কামরুল আহসান।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা পরীক্ষার দিন রাত ১২টা ৫ মিনিট থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত প্রশ্নফাঁস করে। তারা মোবাইল সিমকার্ড, ইন্টারনেট, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে ডিজিটাল সিস্টেমে প্রবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন দফতরের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র সংগ্রহ এবং তা স্থানান্তর করে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ করে আসছিল।
ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ এনে পরীক্ষা বাতিলের দাবি তোলে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো।
প্রশ্নফাঁসের বিতর্কের মধ্যেই গত মঙ্গলবার ফলাফল প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যেখানে পাসের রেকর্ড হয়। নিকটতম অতীতে কোনো ইউনিটে এত ভালো ফলাফল হয়নি।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ‘ঘ’ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৮ হাজার ৪৬৩ জন। এ বছর ভর্তিচ্ছু আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৯৫ হাজার ৩৪১ জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৭০ হাজার ৪৪০ শিক্ষার্থী। যা শতকরা হারে ২৬ দশমিক ২১ শতাংশ। এর আগে ২০১৩-১৪ সেশনে ‘ঘ’ইউনিটে পাসের হার ছিল ১১ দশমিক ৪ ভাগ, ২০১৪-১৫ সেশনে ছিল ১৬ দশমিক ৫৫ ভাগ, ২০১৫-১৬ সেশনে ৯ দশমিক ৯১, ২০১৬-১৭ সেশনে ৯ দশমিক ৮৩ এবং ২০১৭-১৮ সেশনে ১৪ দশমিক ৩৫ ভাগ।
এফএইচ/এনডিএস/আরআইপি