দুই আসামিকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ
গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলার অন্যতম দুই পরিকল্পনাকারীকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া পরোয়ানা (৩০ দিনের মধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ করার আদেশ) এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের (জব্দ) আদেশ জারি করা হয়েছে।
পলাতক দুই আসামি হলেন শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। এ বিষয়ে জারি করা আদেশ তামিল-সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর দাখিলের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এই আদেশ দেন। এই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গোলাম সারোয়ার খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বৃহস্পতিবার জানান, আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করতে না পারায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই আদেশ দিয়েছেন বিচারক। শুনানির সময় মামলায় কারাগারে থাকা চার্জশিটভুক্ত ছয় আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।
এর আগে গত ৮ আগস্ট একই ট্রাইব্যুনাল মামলাটির চার্জশিট আমলে নিয়ে ওই আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। পরে আসামিরা পলাতক রয়েছেন মর্মে বুধবার পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করায় আদালত সম্পত্তি ক্রোক এবং তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
গত ৮ আগস্ট এ মামলায় গ্রেফতার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদন অনুযায়ী অব্যাহতি দেন আদালত। এর আগে গত ২৩ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির মামলাটিতে সিএমএম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটটি ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের (সংশোধনী ২০০৩) ৬(২)/৭/৮/৯/১০/১২/১৩ ধারায় দাখিল করা হয়, যেখানে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা সংখ্যা আট জন। তারা হলেন, হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবির নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম খালিদ ও মামুনুর রশিদ রিপন।
আসামিদের মধ্যে শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ পলাতক এবং অপর ছয় আসামি কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে থাকা আসামিদের মধ্যে মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ ও রাকিবুল হাসান রিগ্যান হামলার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। এর আগে হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন নিহত হন। পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হন।
সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ নিহত পাঁচ জঙ্গি হলেন- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানের সময় নিহত আটজন হলেন- তামীম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।
জেএ/এফএইচ/জেডএ/পিআর