রাজীবের মৃত্যু : ড্রাইভারকে কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৩০ পিএম, ০১ আগস্ট ২০১৮

রাজধানীর কাওরান বজারে দুই বাসের রেষারেষিতে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার তদন্তের স্বার্থে কারাগারে গিয়ে ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ জিজ্ঞাসার এই অনুমতি দেন।

আইনজীবী রুহুল কুদ্দস কাজল সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

এর আগে গত আপিল বিভাগের নির্দেশে বুধবার বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কমিটি গঠন করেন।

যে কমিটিতে বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচার) চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন রয়েছেন। এছাড়া মোয়াজ্জেম হোসেনের মনোনীত আরেকজন সদস্যকে রাখতে পারবেন কমিটিতে।

আইনজীবী জানিয়েছিলেন, আপিল বিভাগের আদেশ অনুযায়ী, রাজীবের মৃত্যুর ঘটনার জন্য দুই বাস কর্তৃপক্ষের দায় নির্ধারণ ও দায়ীদের ক্ষতিপূরণ নিরূপণে কাজ করছে হাইকোর্ট গঠিত কমিটি।

যদিও কমিটিকে এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছিলেন হাইকোর্ট। আজ (১ আগস্ট) নির্ধারিত দিনে তদন্ত কমিটির সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় মঞ্জুর করে আদালত আদেশ দেন বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।

এর আগে গত ৮ মে রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের মালিককে নির্দেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

এর মধ্যে ২৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ এক মাসের মধ্যে দিতে বলা হয় দুই বাস কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু বিআরটিসি ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ১০ মে আপিল আবেদন করে।

১৩ মে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আবেদনটি ১৭ মে শুনানির জন্য পাঠান। এরপর ২২ মে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ দুই বাস কর্তৃপক্ষের মধ্যে কারা দায়ী ও ক্ষতিপূরণ নিরূপণ করতে একটি ‘স্বাধীন কমিটি’ গঠনে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেন।

পরে ওই কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে হাইকোর্ট রাজীবের দুই ভাইকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দেবেন বলেও জানান আপিল বিভাগ।

পাশাপাশি রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) ও স্বজন পরিবহনের মালিককে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত রাখেন আপিল বিভাগ।

গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় দুই বাসের চাপায় হাত কাটা পড়ে কলেজছাত্র রাজীবের। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

গত ৪ এপ্রিল রাজীবের পরিবারকে কেন এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত।

এ রুল বিচারাধীন থাকাবস্থায় গত ১৬ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান রাজীব। পরে রাজীবের মৃত্যুর বিষয়টি আদালতকে জানালে আদালত রাজীবের দুই ভাইকে ক্ষতিপূরণের আদেশ দিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, কৈশোরে বাবা-মাকে হারান রাজীব। এরপর ছোট দুই ভাইকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে লড়েন তিনি। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার টাইপ করে তিনি নিজের এবং ছোট দুই এতিম ভাইয়ের খরচ চালাতেন।

রাজীবের ছোট দুই ভাই মেহেদি ও আবদুল্লাহ তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় সপ্তম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। তারা দুজনেই পবিত্র কোরআনের হাফেজ। একমাত্র বড় ভাই রাজীবকে হারিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে এ দুই তরুণ।

এফএইচ/এমবিআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।