দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো মানবতাবিরোধীর প্রথম জামিন আবেদন
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত নোয়াখালীর সুধারামের আব্দুল কুদ্দুসের করা আপিল শুনানি আগামীকাল রোববার। তার সঙ্গে আসামির জামিন আবেদনও করা হয়েছে। এ বিষয়ে শুনানির জন্য রোববারে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের (কজলিস্ট) কার্যতালিকায় রয়েছে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জাগো নিউজকে বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামি অসুস্থতার গ্রাউন্ডে জামিন আবেদন করেছেন। এ বিষয়টি রোববার দিন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের তালিকায় রয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত এই প্রথম কোনো আসামির জামিন আবেদন করা হয়েছে কোর্টের আপিল বিভাগে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম জাগো নিউজকে বলেন, এই মামলায় মোট আসামি চারজন। এর মধ্যে আব্দুল কুদ্দুসের ২০ বছরের দণ্ড এবং বাকি তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আদালত।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মামলায় ২০ বছরের দণ্ড নিয়ে আপিল বিভাগে জামিন আবেদন করা হয়েছে। জামিনের বিষয়ে রোববার শুনানি হওয়ার কথা। আসামিপক্ষে জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করবেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম জানান, এর আগে এই আসামির আপিল আবেদন করা হয়। আপিলের সঙ্গে তার জামিন আবেদনও করা হয়। কিন্তু এর আগে আর কোনো আসামির জামিন আবেদন করা হয়নি। এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামির মামলায় আপিল বিভাগে জামিন চাওয়া হয়েছে।
রোবববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানির জন্য রয়েছে। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
এর আগে গত ১৩ মার্চ এই মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন অান্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এদের মধ্যে আমির আলী, মো. জয়নাল আবদিন ও আবুল কালাম ওরফে এ কে এম মনসুরের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। একই মামলায় অপর আসামি মো. আব্দুল কুদ্দুসের হয়েছে ২০ বছরের কারাদণ্ড। এই চার আসামির মধ্যে মনসুর পলাতক রয়েছেন। বাকি তিনজন রায় ঘোষণার দিন কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
তবে পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করে সাজা কার্যকর করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে।
নিয়ম অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালের রায়ের এক মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার বিধান রয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আপিল করেছেন এই আসামি। তবে এই প্রথম কোনো মামলার আসামির জামিন চাওয়া হয়েছে আপিল আবেদনে।
আসামির জামিন আবেদনের বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ওনার (আসামি) বয়স ৮৭ বছর। চার ধরনের ক্যান্সার, হুইল চেয়ার ও অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে ফিরতে পারে না। মানবিক কারণে জামিন চাওয়া হয়েছে।
এর আগে প্রসিকিউশন ও আসামি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল গত ৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিলেন। পরে ১৩ মার্চ রায় ঘোষণা করেন।
১৯৭১ সালের ১৫ জুন আমির, কালাম ওরফে মনসুর, জয়নাল ও কুদ্দুসসহ ২০/২৫ জন সশস্ত্র রাজাকার মিলে ৭০/৭৫ জন পাকিস্তানি সেনাকে নিয়ে নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানাধীন শ্রীপুর ও সোনাপুর গ্রামে আক্রমণ করে এবং বাড়িঘরে লুটপাট-অগ্নিসংযোগ করে শতাধিক নিরস্ত্র মানুষকে নির্যাতন ও হত্যা করে। এ অভিযোগে আমির, মনসুর ও জয়নালকে মৃত্যুদণ্ড এবং কুদ্দুসকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
এফএইচ/বিএ/আরআইপি