খালাস চেয়ে খালেদার আপিল শুনানি সোমবার পর্যন্ত মুলতবি
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজার বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানি সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট।
রোববার ষষ্ঠ দিনের শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই মুলতবি করেন। এর আগে গত ১২ জুলাই থেকে আপিল শুনানি শুরু হয়।
আজ আপিল শুনানিতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান, এ জে মোহাম্মদ আলী। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম।
শুনানির সময় খালেদা জিয়ার পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আমিনুল হক, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, জয়নুল আবেদীন, আমিনুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরোদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল, রাগীব রউফ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মো. ফারুক হোসেন, আনিছুর রহমান খান, আইয়ুব আলী আশরাফী, মির্জা আল মাহমুদ, সালমা সুলতানা সোমা, ব্যারিস্টার এম. আতিকুর রহমান, এহসানুর রহমান ও ফাইয়াজ জিবরান প্রমুখ।
আইনজীবীরা আজ এই মামলায় দুদকের ৯ ও ১৫ নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা পড়ে শুনান। আইনজীবীরা শুনানিতে বলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই মামলা করা হয়েছিল। এই মামলা যখন করা হয়েছিল তখন ছিল মাইনাস টু ফরমুলা। আর এখন মাইনাস ওয়ান ফরমুলা নেয়া হয়েছে। দিনভর শুনানি শেষে বিকেলে আগামীকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করেন আদালত।
মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পাঁচ মাসের মাথায় গত ১২ জুলাই হাইকোর্টে করা এ আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়।পর্যায়ক্রমে মামলার আপিল শুনানি ছয়দিন অতিবাহিত হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন বিচারিক আদালত। এরপর থেকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন তিনি।
ওই সাজার বিরুদ্ধে আপিল করে জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১২ মার্চ হাইকোর্ট থেকে চার মাসের জামিন পান তিনি, যা আপিল বিভাগে বহাল থাকে। ওই জামিনের মেয়াদ বাড়াতে করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১২ জুলাই হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ ১৯ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন, যা গত সপ্তাহে শেষ হয়। এখন জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে ২৬ জুলাই করা হয়েছে। তবে, অন্য মামলা থাকায় তিনি কারামুক্তি পাননি।
এই মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করে জামিন আবেদনের পর খালেদা জিয়াকে ১২ মার্চ চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের পর গত ১৬ মে তা বহাল রেখে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। পরে খালেদা জিয়া ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে হাইকোর্টে আপিল মামলার নিষ্পত্তিতে আপিল বিভাগের আদেশ পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদন মুলতবি রেখে আপিল বিভাগ বলেছেন, খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানি ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ না হলে সময়ের প্রার্থনা বিবেচনা করা হবে। সে পর্যন্ত আবেদনটি স্ট্যান্ড ওভার (মুলতবি) রাখা হয়েছে।
দণ্ডের রায় ঘোষণার ১১ দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রায়ের সার্টিফায়েড কপি বা অনুলিপি হাতে পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২০ ফেব্রুয়ারি তারা এ আবেদন করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ এবং অর্থদণ্ড স্থগিত করে নথি তলব করা হয়। এরপর ৭ মার্চ অপর আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। পরে ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। ১০ মে আরেক আসামি শরফুদ্দিনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত। এখন তিন আসামির আপিল ও দুদকের আবেদনের রুল এই আদালতে শুনানি হচ্ছে।
এফএইচ/জেডএ/পিআর