ডাক্তারদের নৈতিকতা নিয়ে হাইকোর্টের প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৫১ পিএম, ১৭ জুলাই ২০১৮

চুয়াডাঙ্গার চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিদের সবারই একটি চোখ ভালো আছে এমন প্রতিবেদন দাখিল করায় ডাক্তারদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট।

চোখ হারানোর ঘটনায় আদালতে উপস্থাপন করা বিশেষজ্ঞ ও ডাক্তারের সমন্বয়ে গঠিত ৬ সদস্যের কমিটির ‘ইম্প্যাক্ট মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের’ বিষয়ে প্রতিবেদনের বিষয়ে দেয়া বক্তব্য নিয়ে আদালত এমন মন্তব্য করেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ও রোগ নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনাকে সভাপতি করে ছয় সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনের আট নম্বর প্যারায় উল্লেখ করা ‘চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিতে আসা সব রোগীর অপারেশনকৃত চক্ষু নষ্ট হলেও অন্য চক্ষু এখনও ভালো আছে, অর্থাৎ একচোখ দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন’ সবারই এক চোখ ভালো আছে বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদনে এমন বক্তব্য থাকায় আদালত ডাক্তারের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এই কমিটির সদস্য সচিব হলেন, ডা. মো. খলিলুর রহমান, উপ-পরিচালক (হাসপাতাল-১), সদস্য মাইক্রোবায়োলজি নিপসম. ঢাকা, সদস্য ডা. ইফতেখার মো. মনির সহযোগী অধ্যাপক (চক্ষু) এনআইও. ঢাকা, ডা. একিউ এম ওমর শরীফ জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু) শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল ও ডা. এটিএম ইকবাল আনোয়ার সায়েন্টিস আইসিডিডিআরবি. ঢাকা।

এর আগে সোমবার চোখ হারানোর দায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এড়াতে পারেন না বলেও মন্তব্য করেছিলেন হাইকোর্ট। আজ মঙ্গলবার ডাক্তারদের দ্বারা গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনের বিষয়ে এমন মন্তব্য করেন।

মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন ঠিক করেছেন আদালত।

আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট অমিত দাস গুপ্ত, সুভাষ চন্দ্র দাস ও মো. শাহিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। ইম্প্যাক্ট মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওষুধ প্রশাসনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. কামাল হেসেন।

এদিন রুল শুনানিতে এই ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দখিল করা দুটি তদন্ত প্রতিবেদন (রিপোর্ট) নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

আদালত বলেন, আমাদের ডাক্তারের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই, তবে তাদের কোনো ধরনের অবহেলা ছিল কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

পরে রিটকারী আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে একটি চক্ষু শিবির অনুষ্ঠিত হয়। ওই চুক্ষ শিবিরে চিকিৎসা নিয়ে ২৪ জনের মধ্যে ২০ জন চোখ হারায়। এ ঘটনায় একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে আমরা একটি রিট দায়ের করি। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রুল জারি করেন। পরবর্তীতে রুলের জবাব না দেয়ায় আদালত স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনকে তলব করেন। গত ৯ জুলাই তারা আদালতে এসেছিলেন। পরে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত লিখিত জবাব দিতে সময় দেন।

১৬ জুলাই তাদের দুজনের পক্ষ থেকে লিখিত জবাব দাখিল করা হয়। ওই জবাবের মধ্যে দেখা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দুটি কমিটি করা হয়েছে। ওই দুই কমিটি দুটি রিপোর্ট দিয়েছে। এর মধ্যে প্রথম রিপোর্টটি করা হয় ১৩ জুলাই আর দ্বিতীয় রিপোর্ট দায়ের করা হয় ১৫ জুলাই।

শুনানিতে অ্যাডভোকেট অমিত দাস গুপ্ত বলেন, সেখানে তিনদিন অপারেশন করেছে ইম্প্যাক্ট কর্তৃপক্ষ। প্রথম দিন ও তৃতীয় দিন চক্ষু অপারেশনকারীদের চোখে সমস্যা ধরা পড়লেও মাঝের দিন অর্থাৎ দ্বিতীয় দিন যে ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে সেটি জীবানু মুক্ত কি-না? এ সময় আদালত বলেন, সেটি দেখবার দায়িত্ব কার? এ কারণে দেখা দরকার সেদিন ওষুধে কোন সমস্যা ছিল না।

এছাড়া আইরিশ কোম্পানিকে পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য বলেছেন আদালত। কারণ আইরিশ কোম্পানির ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছিল রোগীদের চোখে। তাই মামলায় পক্ষভুক্ত করার পর তাদের বক্তব্য শোনবে আদালত।

এর আগে গত ৩ জুলাই চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিতে এসে চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুলের জবাব না দেয়ায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনকে ব্যাখ্যা দিতে তলব করেন হাইকোর্ট।

গত ২৯ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে তিনদিনের চক্ষু শিবিরের দ্বিতীয়দিন (৫ মার্চ) ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন। এদের মধ্যে চারজন রোগী নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইম্প্যাক্টের পক্ষ থেকে ১২ মার্চ একসঙ্গে ১৬ জন রোগীকে ঢাকায় নেয়া হয়। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। ওই অপারেশনের ফলে এদের চোখের এত ভয়াবহ ক্ষতি হয় যে, ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়।

পরে আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত ১ এপ্রিল রিট করেন। রিটের শুনানি নিয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার কেন চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন, চুয়াডাঙ্গার ডিসি ও এসপি, ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার, ডা. মোহাম্মদ শাহীনসহ মোট ১০ জন বিবাদীকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

এফএইচ/জেএইচ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।