এবার ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠানের বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ অধিদফতরে

জাহাঙ্গীর আলম
জাহাঙ্গীর আলম জাহাঙ্গীর আলম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৪৩ পিএম, ০৯ জুলাই ২০১৮

শ্রম আইনের ১২টি বিধির সুস্পষ্ট প্রতিকার না পেয়ে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে শ্রম অধিদফতরে অভিযোগ করা হয়েছে। এর আগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের উপ-মহাপরিদর্শকের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার না পাওয়ায় সোমবার এই অভিযোগটি করেন কর্মচারীরা।

এদিন রাজধানীর কারওয়ান বাজার অবস্থিত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শকের বরাবর এই অভিযোগটি করেন ওই প্রতিষ্ঠানের ৫১ কর্মচারী।

অভিযোগে কর্মচারীরা বলেন, ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর পুরানা পল্টনে অবস্থিত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর উপ-মহাপরিদর্শকের বরাবর গ্রামীণ টেলিকমের লঙ্ঘিত শ্রম আইনের প্রতিকার চেয়ে একটি আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২১ ডিসেম্বর সহকারী মহাপরিদর্শক (সাধারণ) আবুল হাজ্জাত সোহাগ পরিচালিত একটি তদন্ত গ্রামীণ টেলিকমের প্রধান কার্যালয়ে পরিদর্শন শেষে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃক বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ এর ১৩টি ধারা ও বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন দেখতে পান এবং তা বাস্তবায়নের জন্য গ্রামীণ টেলিকমকে ০৭ (সাত) দিন সময় বেঁধে দেন। কিন্তু দীর্ঘ ৭ (সাত) মাস অতিবাহিত হলেও শুধুমাত্র ১৩ নং লঙ্ঘিত ‘কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর হতে রেজিস্ট্রেশন-লাইসেন্স’ গ্রহণ করা ছাড়া আর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই।

সাত বছর ধরে বেতন কাঠামোর পরিবর্তন নেই

প্রায় সাত বছর ধরে বেতন কাঠামোর পরিবর্তন/মহার্ঘ ভাতা প্রদান করছে না গ্রামীণ টেলিকম। এমনকি গত তিন বছর ধরে বার্ষিক বেতন-ভাতা বৃদ্ধি/ইনক্রিমেন্ট প্রদান করছে না।

সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ২০১৫ সালের পে-স্কেল ঘোষণার পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অন্যান্য বেসরকারি/আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ও সরকারি বেতন স্কেলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাপক হারে তাদের বেতন বৃদ্ধি করেছে। এসব কারণে বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানসহ দ্রব্যমূল্য, নিত্য প্রয়োজনীয়, বাড়িভাড়া এবং শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যয় বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ গ্রামীণ টেলিকম যথেষ্ট লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও সব কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে এবং পরিবার পরিজন নিয়ে ঠিকমতো দুবেলা খাবার ও সামাজিক মর্যাদা নিয়ে বসবাস করা যথেষ্ট দুরূহ হয়ে পড়েছে এবং কর্মচারীদের সন্তানেরা মান সম্মত শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যেখানে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীরা গ্রামীণ ফোন, নকিয়া ও হুয়াওয়ের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সমানভাবে কাজ করে চলেছে। কিন্তু সুযোগ-সুবিধার দিক দিয়ে ন্যূনতম মানবাধিকারটুকু পাওয়া যাচ্ছে না এই নোবেল বিজয়ীর প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের কাছে।

কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতির ভয়ভীতি প্রদর্শন

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরে অভিযোগ দেয়ার কারণে সব কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতির ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ, গ্রামীণ টেলিকমে সব প্রকার স্থায়ী পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এর পরিবর্তে তারা টেলেন সেন্টার একটি আউটসোর্সিং কোম্পানির মাধ্যমে জনবল নিয়োগ করছে । গ্রামীণ টেলিকমের লঙ্ঘিত শ্রম আইনসমূহ বাস্তবায়ন না করে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া, যা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর ও শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল।

স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ চেয়ে আবেদন

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ বাস্তবায়ন কল্পে, গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃক লঙ্ঘিত শ্রম আইনের ধারা ও বিধিমালার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ ও বার্ষিক বেতন-ভাতা বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) ও বেতন কাঠামো পরিবর্তন /পে-স্কেলসহ বকেয়া পাওনাদি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ প্রদান করলে আপনার (মহাপরিচালক) কাছে গ্রামীণ টেলিকমের সব কর্মচারীরা চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।

লঙ্ঘিত ১২ বিধি

১. প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক/কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত নিজস্ব নিয়োগবিধি থাকলেও তা মহাপরিদর্শক কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
২. আইনের বিধান মোতাবেক শ্রমিকদের স্থায়ী করা হয়নি।
৩. বিধি মোতাবেক কর্মচারীদের নিয়োগপত্র ও ছবিসহ পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়নি।
৪. বিধি মোতাবেক কর্মচারীদের জন্য সার্ভিস বইয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি।
৫. প্রতিষ্ঠানে বিধি মোতাবেক পদ্ধতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি।
৬. নির্ধারিত ফরম-৩৪ ছক অনুযায়ী শ্রমিক/কর্মচারীদের দৈনিক হাজিরা ও অধিকাল কাজের রেজিস্টার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি।
৭. নির্ধারিত ফরম-৩৭ ছক অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের প্যাডে কর্মচারীদের কাজের সময়সূচির নোটিশ পরিদর্শক কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
৮. শ্রমিক/কর্মচারীদের আইনের বিধান অনুযায়ী ছুটি নগদায়নের সুবিধা প্রদান করা হয়নি।
৯. বিধি অনুযায়ী কর্মচারীগণকে মজুরিসহ প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য একদিন বাৎসরিক ছুটি প্রদান করা হয় না।
১০. বিধি মোতাবেক নির্ধারিত ফরম-৯ ছক অনুযায়ী ছুটির রেজিস্টার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না।
১১. অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং নিট লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ দুটি তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন-২০০৬ অনুযায়ী গঠিত তহবিলে নির্দিষ্ট হারে (৮:১০:১০) জমা প্রদান করা হয় না।
১২. কোম্পানির পলিসি অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন প্রদান করা হলেও অফিস আদেশের মাধ্যমে শুধুমাত্র সার্ভিস বিভাগে যারা কর্মরত আছেন, তাদের সাপ্তাহিক ছুটি দুদিনের পরিবর্তে একদিন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকম গ্রামীণ ফোনের ৩৪ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ারের মালিক।

জেএ/জেএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।