বার কাউন্সিলে সর্বোচ্চ ভোটে জয়ী বাসেত মজুমদার, দ্বিতীয় রেজাউল
সারা দেশের আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে আজ শনিবার। ঘোষিত ফলাফলে মোট ১৪টি পদের মধ্যে ১২টিতেই সরকার সমর্থকরা বিজয়ী হয়েছেন।
এছাড়া গ্রুপ আসন ও সাধারণ আসনে একটি করে মোট ২টি পদে জয় পেয়েছেন বিএনপি সমর্থকরা। গত বারের নির্বাচনের মতো এবারও সাধারণ আসনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে আওয়ামী সমর্থক প্যানেল। এই প্যানেলের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন।
দ্বায়িত্ব হস্তান্তর
আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার পর নবনির্বাচিতদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জাগো নিউজকে জানান, দায়িত্ব হাস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন নাই। এই কমিটি কাজ চালিয়ে যাবে। তবে বার কাউন্সিলের তথ্য কর্মকর্তা ইদুল জান্নান জানান, আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বর্তমান কমিটির সময় (মেয়াদ) আছে। এরপর জুনের ১ তারিখ থেকে নতুন কমিটি দায়িত্ব পালন শুরু করবে। এর আগে ১৪ মে ভোট গ্রহণ শেষ করার পর রাতেই অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে সরকার সমর্থক প্যানেল বিজয়ী হয়েছে বলে জানানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী, বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল ফলাফল ঘোষণা করে থাকেন। সে অনুযায়ী আজ রাত ৯টার দিকে অানুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
এতে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাসেত মজুমদার। তিনি মোট ১৬ হাজার ৩০৬ ভোট পেয়েছেন। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন বার কাউন্সিলের ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক জেষ্ঠ্য আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম। তিনি মোট ভোট পেয়েছেন ১৪ হাজার ৬৬৪। এই প্যানেল থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন এইচ এ এম জহিরুল ইসলাম খান (জেড আই খান পান্না)। তিনি মোট ১৪ হাজার ৪৯৭ ভোট পেয়েছেন। একই প্যানেলের সৈয়দ রেজাউর রহমান পেয়েছেন ১৪ হাজার ১৮৪, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন পেয়েছেন ১৪ হাজার ৯৮, মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান বাদল পেয়েছেন ১৩ হাজার ২৮৮ ভোট। এছাড়া সাধারণ আসনে বিএনপি সমর্থক প্যানেল থেকে একমাত্র বিজয়ী প্রার্থী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি মোট ১৩ হাজার ৭১২ ভোট পেয়েছেন।
গ্রুপভিত্তিক সাতটি পদের মধ্যে আওয়ামী পন্থীরা ছয়টি পদে জয়লাভ করেন। তারা হলেন সাবেক বৃহত্তর ঢাকা জেলা (গ্রুপ-এ) অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু। তিনি ভোট পেয়েছেন ৫ হাজার ১শ’ ৭৫ ভোট। বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর জেলার আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ-বি) মো. কবির উদ্দিন ভূঁইয়া। তিনি ভোট পেয়েছেন ১ হাজার ৫শ’ ৬৫ ভোট। বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা ও সিলেট জেলা অঞ্চলের আইনজীবী সমিতিতে বিজয়ী (গ্রুপ-ডি) এএফ মো. রুহুল আনাম চৌধুরী মিন্টু। তিনি ভোট পেয়েছেন ১ হাজার ৬শ’ ১৬ ভোট। বৃহত্তর খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের আইনজীবী সমিতিতে বিজয়ী (গ্রুপ-ই) পারভেজ আলম খান। তিনি ভোট পেয়েছেন ১ হাজার ৮শ' ৫৮ ভোট। বৃহত্তর রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের আইনজীবী সমিতিতে বিজয়ী (গ্রুপ-এফ) মো. ইয়াহিয়া। তিনি পেয়েছেন ১ হাজার ৪শ’ ৬৭ ভোট। বৃহত্তর দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার আইনজীবী সমিতিতে বিজয়ী (গ্রুপ-জি) রেজাউল করিম মন্টু। তিনি পেয়েছেন ১ হাজার ৪শ’ ৬৩ ভোট।
গ্রুপভিত্তিক পদে শুধু বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ-সি) বিএনপি সমর্থিত প্যানেল থেকে অ্যাডভোকেট মো. দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১ হাজার ৯শ’ ৩০ ভোট। উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত বার কাউন্সিল নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে ১০টিতে আওয়ামী পন্থী ও চারটিতে বিএনপি পন্থীরা জয়লাভ করে।
প্রসঙ্গত এর আগে গত ১৪ মে সারা দেশের জেলা বার সমিতি, উপজেলায় অবস্থিত ১২টি সমিতি ও সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতিতে এই ভোট অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তথ্যমতে, বার কাউন্সিল মূলত ১৫ সদস্যের কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার-১৯৭২’ অনুযায়ী প্রতি তিন বছরে একবার বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে আইনজীবীদের ভোটে সাধারণ আসনে সাতজন এবং আঞ্চলিকভাবে গ্রুপ আসনে সাতজন আইনজীবী সদস্য নির্বাচিত হন। একজন ভোটার মোট আটটি ভোট দিতে পারেন। এর মধ্যে সাধারণ আসনের জন্য ৭টি ভোট এবং অঞ্চলভিত্তিক একটি ভোট। ১৪ জনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে একজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
এফএইচ/ওআর/এমবিআর