‘পরাজয়ের গ্লানি থেকে বাঁচতে ভিত্তিহীন অভিযোগ’
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জাতীয়তাবাদী (বিএনপি) আইনজীবী ফোরামের অভিযোগের জবাব দিলেন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হয়নি। বার কাউন্সিল নির্বাচনে ভয়াবহ পরাজয়ের গ্লানি থেকে বাঁচার জন্য প্রতিপক্ষরা অনাহূতভাবে ধূম্রজাল সৃষ্টি করতে অসত্য ও ভিত্তিহীন বক্তব্য রেখেছেন।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের সফিউর রহমান মিলনায়তনে ‘বার কাউন্সিল’নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পুনরায় নির্বাচনের দাবি তোলেন বিএনপি নেতা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। এরপর একই স্থানে তাৎক্ষণিক আরেকটি সংবাদ সম্মেলন ডেকে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান শ ম রেজাউল করিম বলেন, বার কাউন্সিল নির্বাচনে ভয়াবহ পরাজয়ের গ্লানি থেকে বাঁচার জন্য আমাদের প্রতিপক্ষরা অনাহূতভাবে একটি ধূম্রজাল সৃষ্টি করার জন্য অসত্য ও ভিত্তিহীন বক্তব্য রেখেছেন।
মাহবুব উদ্দিন খোকন অভিযোগ করে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের বর্তমান সদস্য ৯ হাজার ৯২ জন। অথচ বার কাউন্সিল নির্বাচনে ভোটার করা হয়েছে মাত্র ৮৫৩ জনকে। বিগত নির্বাচনে শত শত আইনজীবী এ কেন্দ্রে ভোট দিলেও এ নির্বাচনে তাদের অনুমতি বা অনুরোধ ছাড়াই ঢাকা বারসহ বিভিন্ন বারে স্থানান্তরের কারণে তারা ভোট দিতে পারেনি, এটা নজিরবিহীন। এ সম্পর্কে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সু্প্রিম কোর্ট বারের পক্ষ থেকে ১০ মে একটি চিঠি দিলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই। ফলে সুপ্রিম কোর্ট বারের হাজার সদস্য বার কাউন্সিল নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে বঞ্চিত। এমনকি নির্বাচনের দিনও ৮৮ জনকে ভোট কেন্দ্র পরিবর্তন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
এর জবাবে শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘কাউন্সিলের একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে, একাধিক বারে ভোট দেয়ার প্রবণতা রোধ করতে একজন ভোটার কেবল একটা বারে ভোট দিতে পারবে। সেজন্য সব বারে এবং পত্রিকায় নোটিশের অপশনে বলা হয়েছে, কে, কোন বারে ভোট দিবেন। অপশন না দিলে মূল বারে তিনি ভোট দিবেন। সে সিদ্ধান্তের আলোকে যারা অপশন দিয়েছেন তারা অপশনের বারে রয়েছেন। যারা অপশন দেননি তারা তাদের মূল বারে ভোটার হিসেবে এসেছেন। এ ক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি এবং বার কাউন্সিলের এটা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। ওই কাউন্সিল সভায় সদস্য হিসেবে মাহবুব উদ্দিন খোকনও উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, জাতীয় পরিচপত্র/পাসপোর্ট অথবা সংশ্লিষ্ট বারের পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোটের বিধান আছে। বিশেষ করে ঢাকা বারে কোনো ধরনের পরিচয়পত্র না দেখিয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তারা ভোটের সুযোগ দিয়েছেন, যার কারণে প্রকৃত আইনজীবীরা ভোট দেয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অন্যদিকে আইনজীবী না এমন অনেকে ভোট প্রদান করেছেন। এ অভিযোগের জবাবে শ ম রেজাউল করিম বলেন, এটা সর্বৈব অসত্য। কারণ প্রিসাইডিং অফিসার ছিলেন সকল জুডিশিয়াল অফিসাররা। বিচারকদের বিরুদ্ধে এ জাতীয় কোনো একটি অভিযোগ আনা দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক। সব কিছুতে রাজনীতিকরণ কোনোভাবে যুক্তি সঙ্গত নয়।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিধান থাকা সত্বেও নির্বাচনের দিন প্রত্যেক প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকে রেজাল্ট শিট দেয়া হয়নি। এটা দুঃখজনক ও বেআইনি। ১৪ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণের জন্য তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। অবিলম্বে দুর্নীতির তদন্ত ও দায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। এই নজিরবিহীন দুর্নীতির জন্য বার কাউন্সিল নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনার ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ দাবি করছি। এসব অভিযোগের জবাবে শ ম রেজাউল করিম বলেন, বার কাউন্সিল নির্বাচনে ভয়াবহ পরাজয়ের গ্লানি থেকে বাঁচার জন্য আমাদের প্রতিপক্ষরা অনাহূতভাবে একটি ধূম্রজাল সৃষ্টি করার জন্য অসত্য ও ভিত্তিহীন বক্তব্য রেখেছেন। কোনো অনিয়ম হয়নি। বিভিন্ন বার থেকে রেজাল্ট এসে ঢাকায় গণনা হওয়ার আগে প্রেস কনফারেন্স করার মধ্য দিয়ে প্রশ্ন উঠে তারা কি অগ্রিমই জানতে পেরেছেন তারা হেরে যাবেন। না হলে রেজাল্ট হওয়ার পরে প্রতিকারের জন্য ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। সেখানে তাদের কোনো কথা থাকলে বলতে পারতো।
পরাজয়ের দায় এড়ানোর জন্য অনাহূতভাবে বার কাউন্সিলের একটি স্বচ্ছ নির্বাচন যেখানে বিচারকরা প্রিসাইডিং অফিসার, তাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের কোনো ত্রুটি হয়নি। আইনে কোনো ব্যত্যয় হয়নি। কোনো অনিয়ম হয়নি। দুর্নীতি হয়নি। এ জাতীয় বক্তব্য রাখা বাঞ্চনীয় নয় বলে মন্তব্য করেন শ ম রেজাউল করিম।
এফএইচ/ওআর/পিআর