‘লাভের অংশ তো ঠিকই নেন, মানুষ মারার দায় নেবেন না?’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:২৩ পিএম, ১৭ মে ২০১৮

দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা চলাকালে রাজীবের মৃত্যুর ঘটনায় দায় নিতে চায় না দুই পরিবহনের কেউই।

দুর্ঘটনায় দায়ী বিআরটিসি বাসের আইনজীবীরা বলছেন, তাদের কোনো দোষ নেই। অন্যদিকে স্বজন পরিবহনের আইনজীবী বলছেন, ওই গাড়িটি তাদের (স্বজন পরিবহন) নয়।

বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ শুনানির সময় দুপক্ষের আইনজীবীরা এমন দাবি তোলেন।

দুই পরিবহনের মালিক পক্ষের আইনজীবীদের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেন, ‘আপনার লাভের অংশ নেবেন, মানুষ মারার দায় নেবেন না?’

স্বজন পরিবহনের আইনজীবী পংকজ কুমার কুণ্ড বলেন, ‘ওই গাড়িটি রাজু নামের এক ব্যক্তির।’ বিআরটিসির আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ বলেন, ‘আমরা তো কোনো দোষই করিনি।’

তখন আদালত বলেন, ‘একজন লোক মারা গেল, আপনারা দায় নেবেন না? লাভের অংশ তো ঠিকই নেন।’

মামলার শুনানি শেষে এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী (২১ মে) সোমবার দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।

দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর পর মারা যাওয়া রাজীব হাসানের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে বিআরটিসি ও স্বাজন পরিবহন।

শুনানিতে বিআরটিসির পক্ষের আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ বলেন, ‘আমরা ওই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী নই। স্বজন পরিবহনের গাড়িটি ওইদিন বাম দিক থেকে ওভারটেক করে এসে বিআরটিসির গাড়িটিকে ধাক্কা দেয়। এতে আমাদের দোষের কিছু নাই। অতএব আমি দায়ী না হলে ক্ষতিপূরণের টাকা কেন দেব?’

এ সময় স্বজন পরিবহনের পক্ষের আইনজীবী পংকজ কুমার কুণ্ড আদালতে বলেন, ‘ওইদিনের ঘটনায় স্বজন পরিবহন নামে যে গাড়িটি ছিল, সেটি স্বজন পরিবহন কোম্পানির গাড়ি নয়। গাড়িটি এ কোম্পানিকে মাসে ছয় হাজার টাকা দিত। এ কারণে গাড়িটি স্বজন নাম ব্যবহার করতো।’ আসাদুজ্জামান রাজু নামের একজন ওই গাড়ির মালিক বলে তিনি আদালতকে জানান।

রাজীবের ক্ষতিপূরণের পক্ষে কথা বলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

গত ৮ মে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রাজীবের দুই ভাইকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক কোটি টাকা দেয়ার নির্দেশ দেন। বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে ৫০ লাখ করে মোট এক কোটি টাকা দিতে ওই আদেশে বলা হয়।

হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে প্রথমে আপিল দায়ের করে বিআরটিসি। এরপর তাতে সংযুক্ত হয় স্বজন পরিবহন।

গত ৩ এপ্রিল বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার সামনে দুই বাসের রেষারেষিতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেনের হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজীব মারা যায়।

গত ৪ এপ্রিল রাজীবের দুর্ঘটনায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। আদালত ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন।

এফএইচ/এমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।