মামলার ‘গরমিল হিসাব’ দিচ্ছেন খালেদারই আইনজীবীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২৮ পিএম, ১৬ মে ২০১৮
ফাইল ছবি

একটি দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জামিন দেয়ার পর তার আইনজীবীরা মামলার বিষয়ে গরমিল হিসাব দিচ্ছেন। তবে এখনই মুক্তি পাচ্ছেন কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনজীবীরা মামলার বিষয়ে বিভিন্ন রকম তথ্য দেন।

এমনকি খালেদা জিয়ার আর কয়টি মামলায় জামিন প্রয়োজন সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারেননি তার আইনজীবীরা। তবে, এ বিষয়ে শঙ্কা করছেন, যে সব মামলায় জামিন না নিলে মুক্তি পাবেন না, ওইসব মামলায় জামিন নেয়ার পর যদি নতুন করে আর কোনো মামলা দায়ের না করা হয় তা হলে মুক্তিতে বাধা থাকবেন না। কিন্তু কয়টি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে আর কয়টি মামলা চলমান সে বিষয়ে আইনজীবীরা সুস্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি। আইনজীবীরা বলছেন, নথি দেখার পর বিস্তারিত জানানো যাবে।

জামিনের বিষয়ে কেউ কেউ বলছেন, এখনই তিনি মুক্তি পাবেন। শুধু জামিনের রায়ের কপির অপেক্ষা। রায়ের কপি জমা দেয়ার পর তার জামিন মিলবে। এর মধ্যে আবার বেশির ভাগ আইনজীবীরা বলছেন, অন্যন্যা মামলায় (শ্যোন অ্যারেস্ট) থাকায় আপাতত খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন না।

তবে বিএনপির এই নেত্রীর বিরুদ্ধে কতটি মামলা (শ্যোন অ্যারেস্ট) রয়েছে, তা জানতে চাইলে একজন বলেন, সাতটি, ছয়টি, পাঁচটি আবার কেউ বলছেন তিনটি, কিন্তু অপর একজন আইনজীবীর দাবি দুটি মামলায় রিলিজ (জামিন) পেলে তিনি (খালেদা) মুক্তি পাবেন। রায়ের পর সিনিয়র আইনজীবীদের কাছ থেকে এমন গরমিল তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া ও দুদকের করা আপিল আগামী ৩১ জুলাই এর মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। এরপরও অন্য মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখানোয় আপাতত মুক্তি পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। তবে তাকে কতগুলো মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন তার আইনজীবীরা।

আপিল বিভাগের আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বর্তমানে তিনটি মামলা আছে। দুটি কুমিল্লায় ও একটি নড়াইলে। এসব মামলায় তার জামিন নিতে হবে। সরকার যদি অশুভ প্রচেষ্টা না চালায় তাহলে এসব মামলায় জামিন নিয়ে দ্রুতই ছাড়া পাবেন।

কয়টি মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তা জানতে চাইলে তার আরেক আইনজীবী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এখন পর্যন্ত সাতটি মামলা আছে। তিনটি কুমিল্লায়, দুটি ঢাকায় ও একটি নড়াইলে। সাত মামলার কথা বলা হলেও মওদুদ আহমদের হিসাব অনুযায়ী মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ছয়টি। তবে, পরে অবশ্য জানান, এখনও ছয়টি মামলা রয়েছে। কুমিল্লায় তিনটি, ঢাকায় দুটি ও একটি নড়াইলে।

রায়ের পর আরেক আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া জামিন পেলেও অন্য মামলায় গ্রেফতার থাকায় আপাতত মুক্তি পাচ্ছেন না। তাকে কুমিল্লায় তিন, ঢাকায় দুই ও নড়াইলের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

কুমিল্লার মামলাগুলো কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে, একটি ৩০২ ধারা (হত্যা মামলা) ও অপরটি বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা হয়েছে। বাকি তিনটি মামলাই মানহানির।

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার কারামুক্তিতে আরও ৬ মামলায় জামিন পেতে হবে। এর মধ্যে ৪ মামলায় প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট, এগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। কুমিল্লা, নড়াইল এবং ঢাকাতে এ মামলাগুলো রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সর্বমোট মামলা ৩৬টি।’

খালেদা জিয়ার মামলা প্রসঙ্গে বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে সর্বমোট ৩৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু দু’টি মামলায় প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট (হাজিরা পরোয়ানা) রয়েছে। খালেদা জিয়ার মামলার সব ফাইল আমার কাছেই থাকে। এখন সরকার বাধা সৃষ্টি না করলে এসব মামলাতেও তার জামিনে মুক্তিতে বাধা থাকবে না।’

এদিকে ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৬ মামলা। মামলাগুলো কুমিল্লায় তিন, ঢাকায় দুই ও নড়াইলের একটি।

খালেদা জিয়ার জামিনে কারামুক্তিতে আর ক’টি মামলায় জামিন পেতে হবে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি জানি না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে।’

এফএইচ/জেএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।