খালেদার জামিনের আপিল শুনানি শেষ, আদেশ মঙ্গলবার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৩১ পিএম, ০৯ মে ২০১৮

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ, দুদক ও আসামি পক্ষের করা আপিল শুনানি শেষ করা হয়েছে। এ বিষয়ে রায় ঘোষণা করার জন্য আগামী মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।

বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এদিন ধার্য করেন। দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল থাকবে কিনা সে বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত জানা যাবে আগামী ১৫ মে।

এর আগে বুধবার সকালে ফের আপিল শুনানি শুরু হয়। আদালতে আজ খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুব আলম, তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্ জেনারেল মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির ও মুরাদ রেজা। এবং দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।

এছাড়াও খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মাহাববু উদ্দিন খোকন, বদরোদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল ও সানউল্লাহ মিয়া। এছাড়া বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।

মঙ্গলবার দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। কেন খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল হওয়া উচিৎ- সে বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সামনে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন তারা।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার পক্ষে মঙ্গল ও বুধবার শুনানিতে অংশ নেন এ জে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন কেন বহাল রাখা উচিৎ- সেই যুক্তি আপিল বিভাগের সামনে তুলে ধরেন তারা।

পরে বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের দেয়া যুক্তি খণ্ডন করতে দাঁড়িয়ে এজে মাহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, হাইকোর্টের দেয়া জামিন আপিল বিভাগে বহাল থাকবে। জামিনে হস্তক্ষেপ করে আপিল বিভাগ ব্যতিক্রম কোনো নজির সৃষ্টি করবে না।' পরে যুক্তি খণ্ডন করতে এসে খুরশীদ আলম খান হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার মূল আপিল শুনানির নির্দেশনা চেয়ে জামিন বাতিলের আবেদন জানান।

আর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, খালেদা জিয়ার যেসব অসুস্থতার যুক্তি দেখিয়ে তার আইনজীবীরা জামিন চাইছেন, সেসব সমস্যা বিএনপি নেত্রীর আগেও ছিল। ‘তা নিয়েই তিনি রাজনীতি করে আসছিলেন। সুতরাং সেটা সহনীয় পর্যায়ের। এখন তাকে জামিন দিলে বিচারে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হবে। আপিলের পেপারবুক যেহেতু তৈরি হয়েছে, তার জামিন বাতিল করে আপিল শুনানি শুরু করা প্রয়োজন।'

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার প্রথম দিনের মতো শুনানি শেষ হয়। গত ১৯ মার্চ মামলাটি শুনানির জন্য ৮ মে দিন ধার্য করা হয়েছিল। গত ১২ মার্চ দুদকের আবেদনের শুনানি নিয়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৪ মাসের অন্তবর্তীকালীন জামিন দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা কেন বৃদ্ধি করা হবে না, তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেন আদালত।

হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। ওই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়ের করেন। এরপর ১৯ মার্চ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ ৮ মে পর্যন্ত জামিন স্থগিতের আদেশ দেন। একই সঙ্গে দুই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীদের আপিলের সার-সংক্ষেপ জমা দিতে বলেন।

প্রসঙ্গত, ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামানের আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। এরপর মামলার নথি পেতে দেরি হওয়ায় ২০ ফেব্রুয়ারি ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। হাইকোর্ট বিষয়টির শুনানি নিয়ে নথি তলব করে আদেশ দেন।

নিম্ন আদালত থেকে নথি আসার পর গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। একই আদালত খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ৬ আসামির প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা করে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারে রয়েছেন বিএনপি নেত্রী।

এফএইচ/জেএইচ/এমআরএম/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।