ইসিকে আপিল বিভাগের প্রশ্ন
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (গাসিক) নির্বাচন হাইকোর্টে স্থগিত হওয়ার পর আপিল আবেদন না করার বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে ইসিকে (নির্বাচন কমিশন)।
সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিতের বিরুদ্ধে দুই মেয়র প্রার্থী আবেদন করলেও ইসির পক্ষ থেকে কেন আপিল করা হয়নি তা জানতে চান আদালত।
এ সময় নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীকে আদালত প্রশ্ন করেন, ‘অন্যরা চলে এসেছে। আপনারা বিলম্ব করেছেন কেন?’
আদালতের এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আইনজীবী ওবায়দুর রহমান মোস্তফা জানান, ‘আজই নির্বাচন স্থগিতের বিরুদ্ধে আবেদন করা হবে। তাই একসঙ্গে আবেদনগুলো শুনানির জন্য আর্জি জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, গতকাল শুনানির জন্য পাওয়ার পেয়েছি। বৃহস্পতিবার তিনটি আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করে দেন। পরে আদালত শুনানির জন্য আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) নির্ধারণ করে আদেশ দেন।
গাসিক নির্বাচনের ওপর হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আবেদন করবে, -এমন তথ্য উপস্থাপনের পর এ বিষয়ে শুনানি একদিন পিছিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
নির্বাচন কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার এবং আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে যে আবেদন করেছেন- সোমবার তা শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়েছিলেন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। সে অনুযায়ী আবেদন দুটি বুধবার আপিল বিভাগে উঠলে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী মো. ওবায়েদ রহমান মুস্তফা আদালতকে জানান, তারাও হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল ফাইল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
হাসান উদ্দিন সরকারের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতকে বলেন, ১৫ তারিখ নির্বাচন, শুনানি এখনই করা দরকার। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তখন বলেন, ১৫ তারিখ নির্বাচন, আগামীকাল শুনানি হলে কিছু হবে না।
আদালতে আজ রিটকারীর পক্ষে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে এএম আমিন উদ্দিন ও এস এম শফিকুল ইসলাম বাবু উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গতকাল (৮ মে) দুই মেয়র প্রার্থীর করা আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্য করে দেন চেম্বার আদালত।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করার জন্য বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার এবং গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সোমবার চেম্বার বিচারপতির অনুমতি নেন। এরপর মঙ্গলবার বিকেলে আবেদন দুটি শুনে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
গত ৭ মে সিটি কর্পোরেশনের গাসিক নির্বাচন স্থগিতের বিরুদ্ধে দুই মেয়র প্রার্থী আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন।
গত ৬ মে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গাসিক নির্বাচন ৩ মাসের জন্য স্থগিতের আদেশ দেন বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
একই সঙ্গে, সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজাকে গাজীপুর সিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- এ মর্মে রুলও জারি করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের ৪ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট বি এম ইলিয়াস কচি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান।
আদালতে ৬ এপ্রিল রিট আবেদনটি দায়ের করেন সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজ।
৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (গাসিক)। ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫ জন। গত ৪ মার্চ সিটি কর্পোরেশনের সীমানা নিয়ে গেজেট জারি হয়। যেখানে শিমুলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়বাড়ী, ডোমনা, শিবরামপুর, পশ্চিম পানিশাইল, পানিশাইল ও ডোমনাগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গাজীপুরে মেয়র এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন আগামী ১৫ মে হওয়ার কথা ছিল।
এফএইচ/এমএমজেড/পিআর