রাজীবের সঙ্গে কথা না হওয়ায় আইনজীবীর আফসোস
রাজধানীতে দুই বাসের রেষারেষির মধ্যে পড়ে হাত বিচ্ছিন্ন হওয়া তিতুমীর কলেজ ছাত্র রাজীব ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১৬ এপ্রিল) রাতে মারা যান।
জীবনের কাছে পরাজিত হলেও রাজীব পৃথিবীর কাছে রেখে গেছেন অনেক আক্ষেপ। সেই আক্ষেপ থেকে গেল রাজীবের পক্ষে আদালতে লড়তে আসা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের মনেও।
রাজীবের দুর্ঘটনার পরের দিন হাইকোর্টে ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট আবেদন করেছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। আদালতের আদেশের পরে রাজীবের খালা ফোন করে বলেছিলেন আইসিইউ থেকে বেডে আনা হলে তিনি (আইনজীবী) যেন তাকে দেখতে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্য রাজীবকে আর দেখা হলো না, কথাও হলো না ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের।
রাজীবকে সুস্থ না দেখতে পাওয়ার আক্ষেপ জানিয়ে তিনি বলেন, গত ৪ এপ্রিল সকালে বাসায় নাস্তার টেবিলে বসে পত্রিকায় খবরটি দেখে আঁতকে উঠি। কি ভয়াবহ দৃশ্য। দুটি বাসের রেষারেষিতে একটি হাতের খণ্ডিত অংশ বাসের সঙ্গে লেগে আছে। খবরটি আমার বিবেককে নাড়া দেয়। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিই বিষয়টি আদালতের নজরে আনার।
‘পরে আদালতে এসে আমার অন্যান্য মামলা ফেলে দ্রুত বিষয়টি আদালতের নজরে আনি। আদালত আমার আবেদন শুনে রাজীবকে ক্ষতিপূরণ দেয়াসহ বেশ কিছু নির্দেশনা ও রুল জারির নির্দেশনা দেন।’
‘রাষ্ট্রের একজন নাগরিক এবং একজন আইনজীবী হিসেবে এটা দায়িত্ব মনে করেছি। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই এটা করেছি। রাজীব কে, তার বাড়ী কোথায় কোনো কিছুই তখন জানতাম না। শুধুমাত্র মানবিক জায়গা থেকে একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে বিষয়টি আদালতে নিয়ে আসি। আদালতের আদেশের পরই রাজীবের চিকিৎসা খরচসহ যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সরকার। দেশ-বিদেশসহ সকলের দৃষ্টিগোচর হয় বিষয়টি।’
রাজীব মারা গেছেন এখন রিট মামলা চালানো হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজীবের মৃত্যুর মাধ্যমে এ মামলার বিষয়বস্তু শেষ হয়ে যাবে না। মামলা চালিয়ে যাবো। কারণ রাজীব তো প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ঘটনার একটা নজির মাত্র। ঘটনা তো প্রতিদিন ঘটছে।
তিনি বলেন, রাজীবের মৃত্যুর কারণে এ রিটের সারবর্তা আরও বেড়ে গেলো। আদালতের কাছে এখন আমি বলতে পারবো, হাত হারানো রাজীবের জন্য এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলাম, যে ছেলের জীবন চলে গেলো, যার সম্ভবনা সারাজীবনের জন্য শেষ হয়ে গেলো, তার ভাইদের দেখা শুনার কেউ নেই, তার ক্ষতিপূরণ তো অর্থ দিয়ে হবে না। তা সত্বেও আদালতের কাছে তার এ জীবন হানি, যেটা তার কোনো দোষ নয়, এর একটা যথাপোযুক্ত বিচার ও ক্ষতিপূরণ চাইবো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ মামলা আমি চালিয়ে যাবো। কারণ এ মামলার রায় হলে সাধারণ মানুষ যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্দেশনা আসবে। এর ফলে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে মনে করি।
উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে বিআরটিসি বাসের সঙ্গে স্বজন পরিবহনের বাসের রেষারেষির সময় দুই বাসের চিপায় পড়ে প্রথমে হাত হারায় রাজীব। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এফএইচ/এএইচ/আরআইপি