তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আবারও আদালত অবমাননার রুল
পানির পাম্পের পাইপে পড়ে নিহত শিশু জিহাদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পরিশোধ না করায় রেলওয়ের ডিজিসহ ঊর্ধ্বতন তিন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাবারও আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আবেদনকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল জাগো নিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আমজাদ হোসেন, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান এবং পরিচালক (অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের করা এ সংক্রান্ত এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রুল জারি করেন। আদালতে আজ শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল অ্যাডভোকেট আব্দুল হাই।
এর আগে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ গত ২ মার্চ ঊর্ধ্বতন এই তিন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ না দেয়াই আদালত অবমাননার রুল জারি করেছিলেন।
রায়ের কপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তা পালিত না হওয়ায় কেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তার ব্যাখ্যা প্রথম জারি করা রুলে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তখন তাদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
হাইকোর্টের দেয়া রায় কার্যকর করার জন্য গত ২২ জানুয়ারি ওই তিনজনকে আইনি নোটিশ পাঠান ব্যারিস্টার মো. আবদুল হালিম। নোটিশ পাওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। কিন্তু তা না করায় আদালত অবমাননার মামলা করেন ব্যারিস্টার আবদুল হালিম। এরপর প্রথম দফায় গত ২ মার্চ আদালত অবমাননার রুল জারি করেন আদালত।
জিহাদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক এবং ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ও পরিচালককে (অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ) ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
২০১৭ সারের ৯ অক্টোবর ৪৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এ রায়ে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেন আদালত। এর মধ্যে রেলওয়েকে ১০ লাখ এবং ফায়ার সার্ভিসকে ১০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। রায়ের কপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে এ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে গত বছর ৭ নভেম্বর আদেশ দেন।
এ অবস্থায় চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে পাঠানো আইনি নোটিশে বলা হয়, আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেননি। ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে। হাইকোর্ট ৯০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ সময়সীমা গত ১৯ জানুয়ারি শেষ হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ করেননি। তাই আপনাদের নোটিশ পাওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় আদালত অবমাননার মামলা করা হবে।
২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বন্ধুদের সঙ্গে খেলার সময় রেলওয়ে মাঠের পরিত্যক্ত পানির পাম্পের পাইপে পড়ে যায় জিহাদ। অনেক চেষ্টায়ও তাকে তোলা যায়নি। পরদিন শিশুটির মরদেহ উদ্ধার হয়। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টে পৃথক দুটি রিট আবেদন করা হয়। এর মধ্যে জিহাদের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর রিট আবেদন করেন চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার আবদুল হালিম। চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন।
এফএইচ/জেডএ/এমএস