কানে কম শোনেন কথা বলতে পারেন না : অভিযোগ গঠন পেছালো
একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটকের পর জামিনপ্রাপ্ত আসামি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার ক্যাপ্টেন মোহাম্মাদ শহীদুল্লাহ (৭৫) বিরুদ্ধে অনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন পিছিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তিনি ঠিক মতো কথা বলতে পারেন না, কানেও কম শোনেন, এছাড়া মানসিক ও শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে।
মানবতাবিরোধী পাকিস্তানি আর্মিদের মধ্যে ক্যাপ্টেন শহিদুল্লাহ অন্যতম। ট্রাইব্যুনালের বিচারের মুখোমুখি হওয়া আর্মি অফিসারদের মধ্য তিনিই প্রথম আসামি।
আসামি ক্যাপ্টেন মোহাম্মাদ শহীদুল্লাহ বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ দেয়ার জন্য আগামী ৫ জুন পরবর্তী দিন ঠিক করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এ সময়ের মধ্যে তার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনালের অন্যতম আইনজীবী ও মামলার প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম।
তিনি বলেন, আসামি অসুস্থ থাকায় গত তারিখে তার শারীরিক অবস্থার পরিস্থিতি কেমন, অর্রিৎ- স্বাস্থ্যগত (সিভিল সার্জনের নিকট থেকে) তথ্য জানতে চেয়েছিলেন আদালত। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার নির্ধারিত দিনে ডাক্তারের (সিভিল সার্জনের) স্বাস্থ্যগত তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
এ মামলায় (ফরমাল চার্জ) বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের জন্য ধার্য ছিল। নির্দেশ অনুযায়ী ডাক্তারের প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয় আদালতে। প্রতিবেদনে আসামির মানসিক ও শারীরিক বহু সমস্যা রয়েছে তাই সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত (ফরমালচার্জ) অনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন না করে তা পিছিয়ে আগামী ৫ জুন ঠিক করেছেন। ওই দিন তিনি কথা বলতে পারলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ দেবেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ দিন ঠিক করে আদেশে দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, জেয়াদ আল মালুম ও আবুল কালাম আযাদ। অন্যদিকে আসামির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান ও মো. মাসুদ রানা। এ সময় ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল, রেজিয়া সুলতানা চমন, তাপস কান্তি বল উপস্থিত ছিলেন।
২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর আসামি ক্যাপ্টেন মো. শহিদুলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেন প্রসিকিউটর আবুল কালাম আযাদ। ২০১৬ সালে ২ আগস্ট ক্যাপ্টেন শহিদুল্লাহকে গ্রেফতার করার পরে তাকে কারাগারে পাঠায় ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
ক্যাপ্টেন শহিদুল্লাহ ১৯৬২ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। এরপর ১৯৬৫ সালে সেনা বাহিনীতে যোগ দিয়ে ১৯৬৭ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হন। এরপর ১৯৬৯ সালে ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৭০ সালে তাকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে তাকে পোস্টিং দেয়া হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন ক্যাপ্টেন শহিদুলকে তার নিজ এলাকা কুমিল্লার দাউদকান্দিতে পাঠানো হয়। সেখানে শহিদুলের নেতৃত্বে প্রায় ১৪০/১৫০ জন পাকিস্তানি সেনা সদস্য নিয়ে স্থানীয় স্কুল ও ডাকবাংলোয় ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এরপর ওই এলাকায় হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের মত মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান তারা।
এফএইচ/আরএস/এমএস