বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে রাজউককে প্রস্তুত থাকতে বললেন আপিল বিভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:১৮ পিএম, ২৮ মার্চ ২০১৮

হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবন ভাঙার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষকে (রাজউক) প্রস্তুত থাকার জন্য বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

নির্ধারিত দিনে যথাযথভাবে মুচলেকা না দেয়ায় বিজিএমইএকে ফের মুচলেকা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী (বিজিএমইএ) ভবন ভাঙতে যদি কতৃপক্ষ উদ্যোগ নিতে না পারে তা হলে রাজউককে প্রস্তুত থাকার জন্য বলেছেন আদালত।

এসময় আপিল আদালত বলেন, হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে ৯০ দিনের মধ্যে ভবন ভাঙতে হবে এবং সম্পূর্ণ ব্যায় বহন করবে বিজিএমইএ কতৃপক্ষ। আর যদি তা না করে রাজউককে বলবেন প্রস্তুত থাকতে। আপনারা তো এসব বিষয় স্পষ্ট করেননি। তাই এটি ঠিক করে নিয়ে আসেন এবং আর কোনো সময় চাইবেন না। যদি সময় চান তার লায়াবিলিটি (দ্বায়) কে নেবেন।

পরে আগামী সোমবার আবারও মুচলেকা দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে বিজিএমইএর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মঞ্জিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

আদালতে আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়ে মুচলেকা দিয়েছেন।’

তখন আদালত বলেন, ‘তাহলে বোর্ড অব ডিরেক্টররা আর সময় চাইবে না তো?’

জবাবে কামরুল হক বলেন, ‘আর সময় চাইবো না।’

তখন আদালত বলেন, ‘আপনার আবেদনে আছে এই বোর্ড অব ডিরেক্টর সময় চাইবে না। যখন ছয় মাস পরে ডিরেক্টর পরিবর্তন হবে তখন নতুন ডিরেক্টর এসে সময় চাইলে কী করবেন?’

এরপর আদালত বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ে আছে তিন মাসের মধ্যে ভবন ভেকেন্ট এবং ডেমুলেশন করবেন। কিন্তু আপনাদের দেয়া আন্ডার টেকেনে সেটা নেই। আপনারা হাইকোর্টের রায় পুরোপুরি না দেখে আন্ডারটেকেন দিয়েছেন। আরও ১২ দিন সময় আছে। ভালভাবে একটা আন্ডাটেকেন দেন।’

এরপর আদালত আগামী সোমবার পর্যন্ত সময় দেন।

বিজিএমইএ’র শেষ সময় চাওয়ার শর্ত জমা দেয়া মুচলেকাটি পুনরায় সংশোধন করে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।

আদালত বলেন, ‘মুচলেকার পরিপ্রেক্ষিতে দেয়া নির্দিষ্ট সময় পর আদালতের আদেশ পালন না করা হলে এজন্য বোর্ড অব ডিরেক্টরদের সবাই জন্য দায়ী থাকবেন। একইসঙ্গে ভবন ভাঙতে রাজউককে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখতে বলেছেন।’

২৭ মার্চ মঙ্গলবার বিজিএমইএ আর সময় চাইবে না এ সংক্রান্ত মুচলেকা দিতে বলে সর্বোচ্চ আদালত। ওই দিনই শেষ বারের মতো এক বছরের সময় চেয়ে লিখিত মুচলেকা দেন বিজিএমইএ। তবে লিখিত মুচলেকায় বলা হয়, এরপর আমরা আর সময় চাইব না।

গত ৫ মার্চ বহুতল ভবনটি ভাঙতে আরও এক বছর সময় চেয়ে আবেদন করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ।

ভবন ভাঙতে একাধিকবার সময় নিয়েছে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত বছরের ৮ অক্টোবর সাত মাস সময় দেয় আপিল বিভাগ। আগামী মে মাসে সেই সময় শেষ হবে। তার আগেই সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করে পোশক শিল্প নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানটি।

১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর ভবনটির উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে এটি বিজিএমইএ’র প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিজিএমইএর ভবন ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে বিজিএমইএকে নিজস্ব অর্থায়নে ভবনটি ভাঙতে বলা হয়। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে আদালত বলেন, ভবনটির সৌন্দর্য ও মহিমান্বিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো। এই ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট করা না হলে এটা শুধু হাতিরঝিল নয়, গোটা ঢাকা শহরকে সংক্রমিত করবে।

রায়ে আদালত বলেন, বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাটের অংশ বিক্রি করেছে, তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে। দাবি করার এক বছরের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলা হয় রায়ে।

এফএইচ/এমবিআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।