আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র জমা, কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ বিএনপিতে

মুহাম্মদ ফজলুল হক
মুহাম্মদ ফজলুল হক মুহাম্মদ ফজলুল হক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:১২ পিএম, ১০ মার্চ ২০১৮

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৮-২০১৯ সেশনের নির্বাচনে সরকার সমর্থক আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। আওয়ামী সমন্বয় পরিষদের সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট এসকে মোহাম্মদ মোরসেদ জাগো নিউজকে জানান, আমরা বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। এবারের নির্বাচনে আমরা পুরো প্যানেল জয়ী হব আশা রাখি।

অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী ঐক্য (নীল প্যানেল) সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে দফায় দফায় বৈঠক হয়। পরে আবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে শুক্রবার রাতে দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক হয়। তারপরও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাদা প্যানেল।

তবে ব্যারিস্টার আহসানুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, আজ শনিবার গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক করার পর আগামীকাল বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্যানেলের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার কথা রয়েছে। শুক্রবার রাতে দলীয় সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বসা বৈঠকের পর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নতুন কমিটি গঠনের শর্ত দেয়া হয়েছে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনকে। জানা গেছে, প্রায় নয় বছর ধরে বন্ধ থাকা কমিটি গঠন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা।

শুক্রবার প্রায় তিন ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বিএনপির নেতারা দলীয় আইনজীবীদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বলে সূত্রে জানা গেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় রাত নয়টার দিকে। বিএনপির দলীয় সূত্র মতে, শুক্রবারের বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মধ্যস্থতায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বন্ধ থাকা ফোরাম পুনর্গঠিত হবে। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির পরই নতুন কমিটি গঠনের তৎপরতা শুরু হবে। আর এই বিষয়ে একমত হয়েছেন সিনিয়র নেতা ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। শুক্রবার রাতেই বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দফতরের দায়িত্বে থাকা রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে এই নির্দেশনা দেন।

jagonews24

আইনজীবীরা জানান, আগামী ২১ ও ২২ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য জয়নুল আবেদীন ও মাহবুব উদ্দিন খোকনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার দাবি করলেও শনিবার দলের গুলশান কার্যালয়ে সর্বশেষ বৈঠক করার পর জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের নেতৃত্বাধীন প্যানেল থেকে কাউকে রাখা আবার কাউকে বাদ দেয়া হবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে দলের মহাসচিব মর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে থেকে।

গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপি-জামায়াতের একটি প্যানেল ঘোষণার পর পর বিদ্রোহী এক গ্রুপ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে পাল্টা প্যানেল ঘোষণা করে। ওই প্যানেলে তৈমুর আলম খন্দকারকে সভাপতি ও এ বি এম রফিকুল হক তালুকদারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরের দিন বৃহস্পতিবার আরো একটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়। যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপি সমর্থক সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ্ মো. খসরুজ্জামান। সম্পাদক হলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবুল বাশার। এই প্যানেলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট শামসুল জালাল চৌধুরী ও অর্থ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাবিনা ইয়াসমিন লিপি। তবে অন্য কোন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেননি তারা।

পরে বিএনপির তিনটি প্যানেল ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে দলীয় আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হলে বিএনপির সিনিয়র নেতারা হস্তক্ষেপ করেন। গুলশানের কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে আইনজীবীদের বৈঠক হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বৈঠকে স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য ছিলেন। বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক আইনজীবী জানান, প্রায় নয় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এই ফোরামের সভাপতি হিসেবে আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন ও যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া। রফিকুল ইসলাম মিঞা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতাজনিত কারণে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। বাকি দুইজন ‘দেব-দেব’ করে নির্বাচন পিছিয়ে রেখেছেন এই নয় বছর।

প্রসঙ্গত, আগামী ২১ ও ২২ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত ৪ মার্চ রোববার রাতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৮-১৯ সেশনের নির্বাচনের জন্য সরকার সমর্থকদের আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্যানেল (সাদা প্যানেল) চূড়ান্ত করা হয়। ওই দিন চূড়ান্ত করা প্যানেল প্রার্থী হিসেবে ৮ মার্চ মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এতে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বারের) সাবেক সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে সভাপতি এবং শেখ মোহাম্মদ মোরশেদকে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। সভাপতি-সম্পাদক ছাড়া বাকি পদগুলোর মনোনীতরা হলেন- সহ সভাপতি আলালউদ্দীন ও ড. মোহাম্মদ শামসুর রহমান, ট্রেজারার ড. মোহাম্মদ ইকবাল করিম, সহ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক ও ইয়াদিয়া জামান, সদস্য ব্যারিস্টার আশরাফুল হাদী, হুমায়ুন কবির, চঞ্চল কুমার বিশ্বাস, শাহানা পারভীন, রুহুল আমিন তুহিন, শেখ মোহাম্মদ মাজু মিয়া, মোহাম্মদ মুজিবর রহমান সম্রাট।

এফএইচ/ওআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।