খালেদার আপিল শুনানি বৃহস্পতিবার
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে দায়ের করা আপিলের শুনানির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করা হবে কিনা এ বিষয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে খালেদার আইনজীবীরা উপস্থাপন করার পর বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেন।
আপিলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দীন সরকার, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এজে মোহাম্মদ আলী, আব্দুর রেজাক খান, জয়নুল আবেদীন, মীর মোহাম্মদ নাসির, বদরোদ্দোজা বাদল, বাবু নিতাই রায় চৌধুরী ও সানাউল্লাহ মিয়াসহ খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের অন্যান্য সদস্যরা।
আপিল আবেদনের বিষয়টি শুরুর সময় এজলাসে উপস্থিত খালেদার সব আইনজীবী দাঁড়িয়ে ছিলেন। আপিল আবেদনের গ্রহণের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য হওয়ার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা হাইকোর্টে বেগম খালেদা জিয়াকে দেয়া দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল আবেদন করেছি। আদালত শুনানির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছেন। ওইদিনই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করলে আমরা সেদিন জামিন আবেদনও করবো। আশা করছি, সেদিন তিনি জামিন পাবেন। তারপর তিনি খালাস পাবেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আলাপ-আলোচনার পর আপিলের সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম।
তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত নেবে দুদক। আজ আপিল শুনানির জন্য আমরা মেনশন করেছিলাম। পরে আপিল শুনানির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছেন আদালত। আমরা রায়ের কপি সোমবার রাত ৯টায় পেয়েছি। এটা পড়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
১৯ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের অনুলিপি পেয়ে মঙ্গলবার আপিল করেন। খালেদার আপিল আবেদনকারী আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান।
মঙ্গলবার বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৪৪টি যুক্তিতে আপিল (আপিল নং ১৬৭৬/২০১৮) দায়ের করেন। আপিলে খালেদাকে দেয়া দণ্ড থেকে খালাস চাওয়া হয়েছে এবং এই মামলা মিথ্যা বানোয়াট তাতে সাজা দেয়ার কোন উপাদান ছিল না। এসব যুক্তিসহ ৪৪টি যুক্তি দিয়ে ৬০ পৃষ্ঠার মূল আপিল আবেদনের সঙ্গে ১২২৩ পৃষ্ঠার নথিপত্র জমা দেয়া হয়েছে।
এর আগে আবেদনের কপি নিয়ে খালেদার আইনজীবী আব্দুর রেজাক খানসহ প্রায় অর্ধশতাধিক বিএনপি পন্থী আইনজীবী হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় যান।
এর আগে সকালে খালেদা জিয়ার আপিলের প্রস্তুতি নিয়ে এবং কোন কোর্টে যাবেন তা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন তার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের তৃতীয় তলায় মঙ্গলবার কয়েক দফা বৈঠক করেন আইনজীবীরা। সকাল থেকে বিরতি দিয়ে দুপুরের পরও তাদের বৈঠক শেষে আপিল করেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের জানান, রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে মোট ৪৪টি যুক্তি দেখানো হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো- যে অভিযোগে খালেদা জিয়াকে দণ্ড দেয়া হয়েছে সেটা দুর্নীতির মধ্যে পড়ে না। যে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদার সাজা হয়েছে ওই টাকা এখনও ব্যাংকে রয়েছে বলেও যুক্তি দেখানো হয়েছে।
বিশেষ আদালতের দেয়া সাজার বিরুদ্ধে আপিলে খালেদা জিয়ার খালাসও চেয়েছেন তার আইনজীবরা।
দুর্নীতি দমক কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি।
মামলায় রায় হওয়ার পরই বেগম জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। এরপর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পান খালেদার ছেলে তারেক রহমান। অবশ্য ওই মামলায় তারেককেও ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।
এফএইচ/এসএইচএস/আইআই