ভাষার মাস আমার জন্য সৌভাগ্যের : প্রধান বিচারপতি
নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ‘ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি আমার জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্যের। ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আমি হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাই। দুই বছর পর ২০০৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আমার নিয়োগ হাইকোর্টে স্থায়ী হয়। এর ঠিক আট বছর পর ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগে নিয়োগ লাভ করে শপথ গ্রহণ করি।’
‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে এ ফেব্রুয়ারি মাসেই আমার নিয়োগ হলো। এজন্য আমি ধন্য ও গর্বিত।’
রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকে সংবর্ধনার পর দেয়া বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের স্মরণীয় এ মুহূর্তে আমি স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের, আমার পিতা-মাতার অমূল্য অবদানকে স্মরণ করছি।’
‘বিচার বিভাগের অগ্রসরতার জন্য যা কিছু প্রয়োজন আমি তার সবই করার চেষ্টা করবো। আমি আশা করবো, আমার সহকর্মী সব বিজ্ঞ বিচারক তাদের শপথের মূল বাণী হৃদয়ে প্রোথিত করে জনগণ ও মানবতার কল্যাণে সংবিধানকে সামনে রেখে বিচার কাজ পরিচালনা করবেন।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগ- রাষ্ট্রের এ তিন অঙ্গের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কেবলমাত্র দেশ উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে পারে। তাই এ তিন অঙ্গের কাজের মধ্যে যেন সমন্বয় রক্ষা করা যায় সেজন্য আমি সব সময় চেষ্টা করবো। সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট যেন সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে তার নিজ দায়িত্ব পালন করে সেটি নিশ্চিত করতে আমি চেষ্টা করবো।’
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আয়োজিত জনাকীর্ণ এ সংবর্ধনায় আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ, অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। বঙ্গভবনে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
গত শুক্রবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। পরে তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়।
বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পরপরই পদত্যাগ করেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা বঙ্গভবনে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
বিএসসি ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে দুটি কোর্স সম্পন্ন করা সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ১৯৮৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
১৯৯৯ সালে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। বিএনপি সরকার আমলে ২০০৩ সালে হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারক হন। ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগে নিয়োগ পান তিনি।
১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্ম নেয়া সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি পদে থাকবেন। সে হিসেবে তার চাকরির মেয়াদ আছে আরো তিন বছর।
বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞার পদত্যাগের পর আপিল বিভাগে এখন বিচারক হিসেবে বিচারপতি মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে আছেন বিচারপতি মো. ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
এফএইচ/এমএআর/আইআই