যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যা : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত স্বামীকে খালাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫৩ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

বহুল আলোচিত বগুড়ার কামরুন্নাহার লাকী হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একমাত্র আসামি নিহতের স্বামী রফিকুল ইসলাম বুলবুলকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। রফিকুল ইসলাম বিচারের শুরু থেকেই পলাতক। তিনি সিঙ্গাপুরে থাকেন বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুজ্জামান রুবেল, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মারুফা আক্তার শিউলী। পলাতক আসামি বুলবুলের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট হাসনা বেগম।

১৯৯৮ সালের ১৭ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে মারা যান কামরুন্নাহার লাকী। পরদিন দেশে মরদেহ আনা হয়। এরপর ওই বছরের ১৯ নভেম্বর বগুড়া থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়। এরও প্রায় একবছর পর ১৯৯৯ সালের ২৬ আগস্ট বুলবুলের বিরুদ্ধে বগুড়া থানায় হত্যা মামলা করেন লাকীর মা।

মামলায় বলা হয়, ১৯৯৬ সালের ৫ জুলাই বুলবুলের সঙ্গে লাকীর বিয়ে হয়। এর কিছুদিন পর হতে যৌতুকের জন্য লাকীকে নির্যাতন করা হত। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় তাকে ১২তলা ভবন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ মামলায় রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল বিচার শেষে ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর রায় দেন। রায়ে একমাত্র আসামি বুলবুলের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।

এরপর রাজশাহীর আদালত মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠান। এ ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার মামলার একমাত্র আসামি নিহতের স্বামী বুলবুলকে খালাস দেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুজ্জামান রুবেল সাংবাদিকদের জানান, লাকী মারা যাবার পরপরই সিঙ্গাপুর পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় ও পরে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়। তাদের ওই প্রতিবেদন ইন্টারপোলের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, হত্যার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। আত্মহত্যা বলে প্রতীয়মান হয়। হাইকোর্ট সিঙ্গাপুর পুলিশের ওই তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্বাস করেছেন। এ কারণে আসামিকে খালাস দিয়েছেন।

তিনি বলেন, এই দম্পতির সন্তান না হওয়ায় লাকী হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। এজন্য তিনি চিকিৎসাও নেন। সেই হতাশা থেকেই আত্মহত্যা করেছেন বলে বিচারের সময় উঠে এসেছে। হাইকোর্ট এটাকে বিশ্বাস করে আসামিকে খালাস দিয়েছেন।

মো. মনিরুজ্জামান রুবেল বলেন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন করা হত এবং এ কারণে ১২তলা ভবন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করেছে-সাক্ষীদের একথা বিশ্বাস করে আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন নিম্ন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরো জানান, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

রায়ের সময় লাকীর মা ৮০ বছরের বৃদ্ধা জহুরা হায়দার আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর তিনি কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের বলেন, মেয়েকে হারিয়েছি। এখন তাকে হত্যার বিচার পেলাম না।

এফএইচ/জেডএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।