৬ মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের নির্দেশ
আগামী ৬ মাসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইন-শৃঙ্খালা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ আদেশের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভোটাররা ভোটাধিকার ফিরে পেল বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এ সংক্রান্ত রিটের ওপর জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী অমিত তালুকদার।
এর আগে মঙ্গলবার রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য এই দিন ধার্য করেন। শুনানিতে মাহবুবে আলম বলেন, নির্বাচনের জন্য পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে। অনুকূল পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচন চলছে।
অন্যদিকে, আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডার অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কাজ করবেন। অথচ ১৯৯১ সাল থেকে ডাকসুতে নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। ওই অর্ডার অনুসারে সিনেটে ডাকসুর প্রতিনিধি থাকবেন। ডাকসুর প্রতিনিধি না থাকায় সিনেটের কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।
ছয় বছর আগে নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে গত ৩০ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়াকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়। ২৫ শিক্ষার্থীর করা রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন। আদেশে চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, ১৯৯০ সালের পর আর ডাকসু নির্বাচন হয়নি। ঢাবি কর্তৃপক্ষ ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসন আইন অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হয়েছে। তাই যথাসময়ে নির্বাচন করার নির্দেশনা চেয়ে এ রিট আবেদন করা হয়।
রিটের আগে ডাকসু নির্বাচনে পদক্ষেপ নিতে ৩১ শিক্ষার্থীর পক্ষে ২০১২ সালের ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও ট্রেজারারকে লিগ্যাল নোটিশ দেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই নোটিশের কোনো জবাব না দেয়ায় ওই বছরই ২৫ শিক্ষার্থীর পক্ষে রিট আবেদন করা হয়।
এরপর ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল হাইকোর্ট নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করার ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরকে উক্ত রুলের জবাব দেয়ার জন্য বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দেন। এই রুলের ওপর মঙ্গলবার শুনানি শেষ হয়। বুধবার এ বিষয়ে রায় ঘোষণা করা হবে।
রিট আবেদনে বলা হয়, ১৯৯৮ সালের ২৭ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আজাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ডাকসু নির্বাচনের পর এর সময়সীমা হবে এক বছর। পরবর্তী তিনমাস নির্বাচন না হলে বিদ্যমান কমিটি কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। এ সিদ্ধান্তের পর ডাকসু ভেঙে দেয়া হয়।
ডাকসু বিধান অনুযায়ী প্রতিবছর নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। প্রায় ২২ বছর আগে ১৯৯০ সালের ৬ জুলাই ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের এ ব্যর্থতার কারণে হাজারো শিক্ষার্থী তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এফএইচ/এনএফ/আরআইপি/আইআই