‘শৃঙ্খলাবিধির গেজেট নিয়ে মিডিয়ায় উল্টাপাল্টা লেখা হচ্ছে’
অধস্তন (নিম্ন) আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে সরকারের প্রকাশ করা গেজেট গ্রহণ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
গত ১১ ডিসেম্বর সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিচারকদের চাকরিবিধির গেজেট প্রকাশ করে। পরে তা সত্যায়িত (এফিডেভিট) করে আপিল বিভাগে জমা দেন রাষ্ট্রপক্ষ। আজ তা গ্রহণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
গেজেট নিয়ে করা মূল্যায়নে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ ছাড়া কিছুই করতে পারবে না। অথচ পত্রিকায় লেখা হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট সব দিয়ে দিয়েছে। গণমাধ্যমে উল্টাপাল্টা লেখা হচ্ছে। গেজেট নিয়ে শুনানির সময় আদালত মিডিয়ার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এমন মন্তব্য করেন।’
বিধিমালার ২৯ নম্বর ধারা রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল পড়ার সময় আদালত বলেন, ‘এটাতো আরো মারাত্মক। ২৯ নম্বর ধারা দেখুন। সেখানে বলা আছে, কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ প্রাধান্য পাবে। দুঃখ হলো, কেউ পড়ে না। এই ধারা না পড়েই আন্দাজে মন্তব্য করে। তারা না পড়ে লেখে গেলো গেলো সব গেলো।’
আদালত বলেন, আমরা ৫ জন (আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতি) বসলাম। আমরা কি এতই বোকা? আমরা কি নবিশ বিচারক? আমরা নাকি সব শেষ করে দিয়েছি।
বুধবার দুপুরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ ওই গেজেট গ্রহণ করে আদেশ দেন।
শুনানির শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আদালত চাকরি সংক্রান্ত শৃঙ্খলার বিধিমালা গেজেট আকারে জারির নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত ১১ ডিসেম্বর সেটা জারি করা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, আমাদের আরও একটি আবেদন আছে। ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট এ আদালত যে আদেশ দিয়েছিলেন সেখানে ১১৬ অনুচ্ছেদের রাষ্ট্রপতির বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ ছিল। আমরা সেটা প্রত্যাহার চাচ্ছি।
এসময় আদালত বলেন, সেটা করা যাবে। আগে গেজেটের বিধিগুলো পড়ুন। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বিধিমালা পড়তে গেলে মাসদার হোসেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ডায়াসে দাঁড়ান।
তিনি বলেন, বিধিমালা চ্যালেঞ্জ করে রিভিউ আবেদন করবো। এ বিষয়ে আমার একটি লিখিত বক্তব্য রয়েছে। সেটা দেখুন। সেটা নিষ্পত্তি করুন। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী রুলস তৈরি করবে হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করবেন রাষ্ট্রপতি। এরপর গেজেট জারি হবে।
এসময় আদালত বলেন, মাসদার হোসেন মামলায়ই আপিল বিভাগ রুলস তৈরি করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী এর আগেও রুলস তৈরি হয়েছে। গেজেট জারি হয়েছে।
এ সময় ব্যারিস্টার আমীর বলেন, এই গেজেট নিয়ে কথা বলতে চাই। জবাবে আদালত বলেন, অবশ্যই বলবেন। রুলস-এ কি আছে সেটা দেখতে চাই। যদি অন্য কোনো কিছু থাকে তা তো যেকোনো সময় পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বলা হচ্ছে, আমরা সব দিয়ে দিয়েছি। কোথায় সব দিয়ে দিয়েছি, তা দেখান। গণমাধ্যমে উল্টাপাল্টা লেখা হচ্ছে।
এরপর আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে গেজেট থেকে বিভিন্ন ধারা পড়তে বলেন। আদালতের কথা মতো অ্যাটর্নি জেনারেল বিভিন্ন ধারা পড়তে থাকেন। সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ করার কথা আসা মাত্রই আদালত বলেন, দেখুন সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করার বিধান করা হয়েছে।
এক পর্যায়ে আদালত বলেন, দেখুন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জায়গায় সুপ্রিম কোর্টের নাম ঢুকিয়েছি। আগে সুপ্রিম কোর্টের নাম ছিল না। সবখানে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করার কথা বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া অনুসন্ধান করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া সরকার কিছুই করতে পারবে না। অথচ পত্রিকায় লেখা হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট সব দিয়ে দিয়েছে।
আদালত বলেন, কোনো প্রস্তাব দিলেও সুপ্রিম কোর্ট পরামর্শ না দিলে কিছু করতে পারবে না উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ। কোনো কিছু করতে হলে আমাদের (সুপ্রিম কোর্ট) পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি পদক্ষেপে অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
এসময় ব্যারিস্টার এম আমীর বলেন, সুপ্রিম কোর্ট গেজেট গ্রহণ করার পর আমার আর কিছুই বলার থাকে না। এরপর আদালত আদেশ দেন।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। গত ১১ ডিসেম্বর সরকার বিধিমালা গেজেট আকারে জারি করে।
এফএইচ/জেএইচ/এমএস