মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হচ্ছে : হাইকোর্ট
দিনাজপুরে এসি ল্যান্ডের কক্ষে বসা নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে ক্ষমতা দেখিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জ্যেষ্ঠ এক আইনজীবীকে সাজা দেয়ার ঘটনায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, শুধু এই ক্ষেত্রে নয়, সকল ক্ষেত্রেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হচ্ছে। ক্ষমতা দেয়া হয় সঠিক প্রয়োগের জন্য। কিন্তু তার অপপ্রয়োগের ব্যাপারে ঝোঁক বেশি দেখা যায়।
বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের অবকাশকালীন বেঞ্চ এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
দিনাজপুরে এসি ল্যান্ডের কক্ষে বসা নিয়ে এক আইনজীবীকে সাজা দেয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিরোদা রানী রায়কে তলব করে গত ১৭ ডিসেম্বর আদেশ দেন হাইকোর্ট।
নির্দেশ মোতাবেক বিরোদা রানী রায় আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে এ বিষয়ে শুনানি শেষে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ঠিক দেন আদালত।
আইনজীবী নিরোদ বিহারী রায়ের পক্ষে ছিলেন সৈয়দ মহিদুল কবির ও কাজী হেলাল উদ্দিন। অন্যদিকে এসি ল্যান্ড বিরোদা রানী রায়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মামুন মাহবুব।
পরে আইনজীবী মামুন মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে আমরা মৌখিকভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি। আদালত বলেছেন লিখিতভাবে ক্ষমা চাইতে। আগামীকাল আমরা তা লিখিতভাবে আদালতে দাখিল করবো। আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামীকাল দিন ঠিক করে দিয়েছেন।’
অন্যদিকে আইনজীবী কাজী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আইনজীবীদের মর্যাদার প্রশ্নে এ ঘটনাটি আমরা আদালতের নজরে আনি। আমি মনে করি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে একজন প্রাকটিশনার আইনজীবীদের সাজা দেয়া মোবাইল কোর্টের আইনের অপব্যবহার। এই ধরনের অপব্যবহার যারা করেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া উচিত।’
গত ১৪ ডিসেম্বর একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবর আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মহিদুল কবির ও কাজী হেলাল উদ্দিন। পরে আদালত এ আদেশ দেন।
আইনজীবী কাজী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘গত মঙ্গলবার সকালে একটি নামজারির মামলায় শুনানি করতে গেলে আইনজীবী নিরোদ বাহারী রায়কে ৫০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক দিনের করাদণ্ড দেন ভুরুঙ্গামারীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিরোদা রানী রায়। নিরোদ বাহারী রায়কে সাজা দেয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।’
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মো. সাহেব আলী নামের এক ব্যক্তির একটি জমির খারিজ আবেদনের (পুরাতন নাম বাতিল করা বা নামজারি) শুনানি ছিল গত মঙ্গলবার এসি ল্যান্ড অফিসে।
সাহেব আলীর প্রতিপক্ষ হলেন মো. খায়রুল ইসলাম গং। সাহেব আলীর আইনজীবী হচ্ছেন নিরোদ বাহারী রায়। আর প্রতিপক্ষ খায়রুল ইসলাম গংয়ের আইনজীবী হলেন অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী মোহাম্মদ ওয়ারিস উল ইসলাম অলি।
আইনজীবী ওয়ারিস উল ইসলাম জানান, বীরগঞ্জ উপজেলার ভোগনগর ইউনিয়নের গোপালপুর মৌজার একটি জমির খারিজ বাতিলের মামলা চলমান রয়েছে। সেই মামলার শুনানি ছিল মঙ্গলবার।
সেদিন সকালে মামলার প্রার্থী মো. সাহেব আলীর পক্ষে শুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য উপস্থিত হন নিরোদ বিহারী। শুনানির জন্য আগেই কক্ষে বসা ছিলেন ওয়ারিস উল ইসলাম ও তার সিনিয়র।
পরে আইনজীবী নিরোদ বিহারী যখন আসেন, তখন এসি ল্যান্ডের কক্ষে আরেকটি মামলার শুনানি চলছিল। ওই সময় নিরোদ বিহারী নিজের পরিচয় দিয়ে এসি ল্যান্ডের অনুমতিক্রমে ভেতরে প্রবেশ করে বসতে চান। তখন বিরোদা রানী রায় তাকে বাইরে যেতে বলেন। কিন্তু নিরোদ বিহারী নিজের পরিচয় দিয়ে বসার অনুমতি চান।
তখন প্রতিপক্ষের আইনজীবী ওয়ারিস উল ইসলাম এসি ল্যান্ডকে বলেন, ‘ম্যাডাম, আমরা আইনজীবীরা তো এভাবেই বসে থাকি।’
এ কথা শুনে এসি ল্যান্ড বলেন, ‘আপনি চুপ থাকুন।’ তাতে চুপ হয়ে যান ওয়ারিস উল ইসলাম। তখন সিনিয়র আইনজীবী নিরোদ বিহারী এসি ল্যান্ডকে এমন ব্যবহার করছেন কেন জানতে চান। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্ক বেধে যায়। তখন এসি ল্যান্ড নিজের ক্ষমতাবলে নিজ কক্ষে ভ্রাম্যমাণ আদালত ঘোষণা করেন এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের ১৮৬ ধারা অনুযায়ী (সরকারি কাজে সরকারি কর্মকর্তাকে বাধা) আইনজীবীকে ৫০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক দিনের কারাদণ্ডের রায় দেন। এসব কারণে জমির ওই খারিজ আবেদনটির ওপর শুনানি হয়নি।’
নিরোদ বিহারীকে উদ্ধৃত করে খবরে বলা হয়েছে, ‘সাজা দেয়ার সময় এসি ল্যান্ড তার বক্তব্যে ‘আমি আমার ক্ষমতা দেখালাম, পারলে আপনি আপনার ক্ষমতা দেখান এমন উক্তি করেছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী সিনিয়র আইনজীবী নিরোদ বিহারী রায়।
এফএইচ/এমবিআর/এনএফ/আরআইপি