খালেদার দুর্নীতি মামলা : যা বলছেন সাবেক মুখ্য সচিব
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা প্রায় শেষ পর্যায়ে। মামলায় খালেদা জিয়া দাবি, ‘ট্রাস্টের কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সে জড়িত নন। মামলায় তিনি খালাস পাওয়ার যোগ্য।’ তবে খালেদা জিয়ার সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী বলছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ফান্ডের সকল কর্মকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রীর (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া) লিখিত অনুমতি রয়েছে। তার অনুমতি নিয়ে অরফানেজ-এর নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয় এবং ওই অ্যাকাউন্টে বিদেশ থেকে আসা অর্থ জমা হয়।
২০০৮ সালের ১১ আগস্ট খালেদা জিয়ার মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী অস্ট্রেলিয়া থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেন। ওই চিঠির কপি আদালতে জমা দিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন আর রশীদ।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি বর্তমানে রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন। আগামী ১৯, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর মামলাটির যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য রয়েছে। যুক্তি উপস্থাপন শেষে আলোচিত এ মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হবে।
চিঠিতে খালেদা জিয়া সাবেক মুখ্য সচিব বলেন, জিয়া অরফানেজ ফান্ডের বিষয়ে আমার বক্তব্য নিম্নে দেয়া হলো। বিষয়টি ১৯৯১ সালের কথা, আমি যা কিছু লিখেছি তা অবশ্যই স্মৃতি শক্তি ব্যবহার করেই লিখছি।
‘আমার যতটুক মনে পরে, মধ্য প্রাচ্যের কোনো একটি দেশ থেকে (কুয়েত) ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর (খালেদা জিয়া) নামে চেক আসে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট। তিনি চেকটি প্রধানমন্ত্রীর নিকট হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রী (খালেদা জিয়া) পরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে আমাকে ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে বলেন এবং এই চেকটি উক্ত অ্যাকাউন্টে জমা দিতে নির্দেশ দেন। আমি সে অনুসারে নথিতে নোট দেই। সেই নোট প্রধানমন্ত্রীর লিখিত সম্মতি পাওয়ার পর অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা নেই এবং চেকটি উক্ত অ্যাকাউন্টে জমা দেই।’
‘কিছুদিন পর আবার প্রধানমন্ত্রীর লিখিত অনুমতি নিয়ে অ্যাকাউন্টিকে এফডিআর করার ব্যবস্থা নেই, যাতে টাকার অংক বাড়ানো যায়। আমি শুনতে পাচ্ছি যে, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কাগজ/নথি পাওয়া যাচ্ছে না। আপনি ভালো করে জানেন যে, বাংলাদেশ সরকারি কাগজপত্র/নথি ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হয় না এবং সময় যেতে যেতে এগুলোর গুরুত্ব কমে যায়। সমস্যা হলো এ যে, আমার পর্যায়ে অফিসার সরকারি কোনো কাগজপত্র/নথি নিজের তত্ত্বাবধায়নে রাখতে পারে না। বিধি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কাগজপত্র রাজনৈতিক সকল কর্মকাণ্ড তার মুখ্য সচিবকে করতে হয়।’
‘সুতরাং এ বিষয়ে আমার কিছুই করার নেই। বিশেষ করে যেহেতু আমি এখন বিদেশে অবস্থান করছি। তবে আমার বিশ্বাস আপনারা যদি নিবিড়ভাবে খোঁজ করেন তাহলে হয়তবা সংশ্লিষ্ট নথি/কাজগপত্র পেতেও পারেন।’
‘১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রীর (খালেদা জিয়া) অরফানেজ ফান্ড অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। আমি প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে মালয়েশিয়া যাই ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আমি আরও সাড়ে তিন বছর ওই অফিসে চাকরিরত ছিলাম। অ্যাকাউন্টি প্রধানমন্ত্রীর (খালেদা জিয়া) নামে। এর মধ্যে পত্র-পত্রিকায়ও এ সংক্রান্ত লিখা হয়েছে। সুতরাং আমি যদি ওই সংক্রান্ত অ্যাকাউন্ট প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া খুলতাম তাহলে এটা জানাজানি হয়ে যেত এবং প্রধানমন্ত্রীর গোচরিভুক্ত হত এবং এ জন্য আমাকে শাস্তি পেতে হত। কিন্তু সেটা যখন ঘটেনি এতে কি প্রমাণ হয় না যে, আমি প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণ ও লিখিত অনুমতি নিয়েই অ্যাকাউন্ট খুলেছিলাম?’
‘আপনারা জানেন যে, গোপনীয় ফান্ড ব্যতিত প্রধানমন্ত্রীর সকল ফান্ড প্রতি বছর অডিট করা হয়ে থাকে। যদি আমি কোনো ব্যত্যয় ঘটাতাম তাহলে কি এত বছর কোনো অডিট হত না? যেহেতু তা হয়নি এটা কি প্রমাণ হয় না যে, আমি প্রধানমন্ত্রীর লিখিত অনুমতি ছাড়া কিছুই করি নাই?’
‘দয়া করে প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য তহবিল (প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল, কল্যাণ তহবিল, সেচ্ছাধীন তহবিল, গোপনীয় তহবিল ইত্যাদি) দেখুন, সেগুলো কিভাবে পরিচালিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর লিখিত অনুমতি নেয়া হয়েছে। আমার অনুরোধ এসব তহবিল/অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আর যারা সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাদের সাথে কথা বলুন। আমরা বিশ্বাস তারা আমার বক্তব্যের বিষয়ে বলবে।’
‘আপনি কি বিশ্বাস করতে পারেন যে, প্রধানমন্ত্রীর অরফানেজ ফান্ড থেকে জিয়াউর রহমানের নামে ট্রাস্টের কাছে টাকা বরাদ্দ হবে আর সেটা বেগম খালেদা জিয়া জানবেন না। যখন তিনি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতির সহধমিনী। সুতরাং এখান থেকে প্রমাণ হয় যে, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়েই টাকা বরাদ্দ হয়েছে।’
‘আমি আবারও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই যে, প্রধানমন্ত্রীর অরফানেজ ফান্ড সংক্রান্ত আমার দ্বারা সম্পাদিত সকল কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর লিখিত অনুমতি নিয়েই করা হয়েছে।’
জেএ/আরএস/পিআর