লেকহেড স্কুলের বিরুদ্ধে ভয়াবহ তথ্য ছিল : অ্যাটর্নি জেনারেল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৫৪ এএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭
ফাইল ছবি

জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে বন্ধ করে দেয়া রাজধানীর ধানমন্ডি ও গুলশানের লেকহেড স্কুলের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ভয়াবহ তথ্য ছিল বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমার মতে, আপিল বিভাগে আমরা যে গোয়েন্দা প্রতিবেদন দাখিল করেছি তাতে ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ ছিল। এই স্কুলের সাবেক পরিচালনা পর্ষদ, সাবেক কিছু শিক্ষক ও অভিভাবকের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এই স্কুলের সঙ্গে যুক্ত একজন সেনা কর্মকর্তা (মেজর) মিরপুরে একটি বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মারা গেছেন। এই স্কুলের শিক্ষক, অবিভাবক ও পরিচালনা পরর্ষদের কয়েকজন সদস্য সিরিয়ায় আইএসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

লেহহেড গ্রামার স্কুলের আদেশের পর মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।

এ সময় মাহবুবে আলম বলেন, জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা ও ধর্মীয় উগ্রবাদে উৎসাহ দেয়ার অভিযোগে বন্ধ করে দেয়া লেকহেড গ্রামার স্কুলে সাতদিনের মধ্যে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে গঠিত ওই পর্ষদের সভাপতি হবেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার। সেনাবাহিনীর শিক্ষা কোরের কর্মকর্তাদেরও ওই কমিটিতে রাখতে হবে। প্রিন্সিপালও হবেন সেনাবাহিনী থেকে আসা।

লেকহেড গ্রামার স্কুল খুলে দিতে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্কুলটি খোলা থাকবে বলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, লেকহেড স্কুলটির অনেক অনিয়ম। এটির গভর্নিং বডি নাই, শিক্ষকদের বিজ্ঞাপন দিয়ে নিয়োগ করা হয়নি ইত্যাদি ইত্যাদি। এছাড়া স্কুলটির বিরুদ্ধে সরকারের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো- স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা, অনেক সাবেক শিক্ষক, বর্তমান শিক্ষক, কিছু অভিভাবকের সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে।

এ ব্যাপারে আমরা আদালতের কাছে কিছু ক্লাসিফাইড তথ্য দিয়েছি। এর ভিত্তিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আদেশ দিয়েছে আগামী সাত দিনের ভেতরে শিক্ষা সচিবের অধীনে ঢাকার ডিভিশনাল কমিশনারকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করার জন্য।

এই কমিটি স্কুল পরিচালনার ব্যাপারে দেখভাল করবে। এই কমিটি সেনাবাহিনীর শিক্ষাকোরের কর্মকর্তাদের ভেতর থেকে একজনকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেবে। সাতদিনের মধ্যে এসব হলেই স্কুলটি আবার চালু করতে যাবে।

আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্কুলটি এই পরিচালনা পর্ষদের অধীনেই পরিচালিত হবে জানিয়ে মাহবুবে আলম বলেন, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল গ্রহণ করেছে। এখন আপিল শুনানি হবে। কোন কোন গ্রাউন্ডে শুনানি করব ইতোমধ্যে সে নোট আদালতে জমা দিয়েছি।

আদেশের পর স্কুলের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, সাতদিনের মধ্যে কমিটি গঠন করা হলেই স্কুল খুলে দেয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি।

তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সাতদিনের মধ্যে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে হবে। এই কমিটিতে সেনাবাহিনীর দুজন প্রতিনিধিকে রাখতে বলা হয়েছে। দুই সেনা প্রতিনিধির মধ্যে শিক্ষা কোরের কর্মকর্তাকে স্কুলটির অধ্যক্ষ করতে বলা হয়েছে। এই কমিটি স্কুলটির নিয়মিত শিক্ষাকার্যক্রম নিশ্চিত করবে।

জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা, ধর্মীয় উগ্রবাদে উৎসাহ দেয়াসহ কয়েকটি অভিযোগে গত ৬ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকায় লেকহেড গ্রামার স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেয়। ঢাকা জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ইলিয়াস মেহেদী পরদিন ওই স্কুলে গিয়ে সিলগালা করে দেন।

ওই স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিন এবং ১২ শিক্ষার্থীর অভিভাবক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যান। তাদের দুটি রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৯ নভেম্বর রুল জারি করে।

লেকহেড গ্রামার স্কুলের গুলশান ও ধানমণ্ডি শাখা বন্ধের আদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, কেন স্কুলের মালিককে স্কুল খোলা ও পরিচালনা করতে দেয়ার জন্য বিবাদীদের নির্দেশ দেয়া হবে না এবং কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়া স্কুলের শিক্ষার্থীদের সব ধরনের শিক্ষাকার্যক্রম চালু রাখতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

১৪ নভেম্বর ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্কুলটি খুলে দেয়ার রায় দেন হাইকোর্ট। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে দেন। বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে এলে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও দশদিন বাড়িয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে বলে সর্বোচ্চ আদালত। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করলে আপিল বিভাগ শুনানি নিয়ে আদেশ দেন।

এফএইচ/এআরএস/জেডএ/জেআইএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।