‘প্রধান বিচারপতি ছুটির সঙ্গে ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের সম্পর্ক নেই’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪১ এএম, ০৩ অক্টোবর ২০১৭
ফাইল ছবি

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার ছুটি নেওয়ার সঙ্গে ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা জানান।

সর্বশেষ ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপোড়নের মধ্যে এক মাসের ছুটি নিয়েছেন এসকে সিনহা।

বিএনপি বলছে, চাপের মুখে প্রধান বিচারপতি ছুটিতে গেছেন- এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ওনাদের এই বক্তব্য ভিত্তিহীন। এটার কোনো প্রমাণ নেই। ইউজলেস কথাবর্তার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’

আপনারা বলছিলেন ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করবেন- একজন সাংবাদিক বলতেই মন্ত্রী বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর সঙ্গে এটার কোনো সম্পর্ক নেই।’

আপনারা তো রায়ের সমালোচনা করেছেন- এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এখনও করছি।’

আনিসুল হক বলেন, ‘কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। শোনেন পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর সমালোচনা করা আমাদের অধিকার। সংক্ষুব্ধ পার্টি হিসেবে আমরা কি ব্যবস্থা নেব সংসদে সেটা প্রস্তাব আকারে পাস হয়েছে। সে কারণে আমরা আইনি পদক্ষেপ অবশ্যই নেব। এর সঙ্গে প্রধান বিচারপতির অসুস্থতার কোনো যোগসাজশ নেই।’

এভাবে প্রধান বিচারপতির ছুটি নেওয়ার বিষয়টিতে বিএনপি নজিরবিহীন বলেছে- এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ওনারা বলে দিলেন এটা নজিরবিহীন, মানুষ অসুস্থও হতে পারবে না। এর আগে যেহেতু কেউ হয়নি এখনও হতে পারবে না। এ রকম কথা যদি ওনারা বলে থাকেন, ওনাদের অবাস্তব কথার জবাব দেওয়ার জন্য আমি এখানে বসিনি।’

‘প্রধান বিচারপতি তার পত্রে লিখেছেন, তিনি ক্যান্সার ও নানাবিধ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সেগুলো সম্পূর্ণ সারেনি। উনি বলেছেন উনার বিশ্রামের প্রয়োজন। সে জন্য উনি এক মাসের ছুটি নিয়েছেন।’

আসিনুল হক বলেন, ‘এখন নিয়মটা কি? বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি নিজের ছুটি নিজে নেন। এটা কারো কাছ থেকে অ্যাপ্রুভ করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যেহেতু তিনি ছুটিতে যাবেন, ছুটিতে থাকাকালীন আরেকজন প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন। সে কারণে তিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে তার ছুটির ব্যাপারে অবগত করেন। রাষ্ট্রপতির কাছে যে পত্র দেয়া হয় সেটি আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রসেসজড হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর হয়ে রাষ্ট্রপতির দফতরে যায়। সেক্ষেত্রে তিনি আমাদের অবহিত করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে প্রধান বিচারপতি যখন অসুস্থতা বা অন্য কারণে তার কাজ করতে অসমর্থ হন তখন প্রবীণতম বিচারপতি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব অস্থায়ীভাবে পালন করেন। সেই ক্ষেত্রে বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা হচ্ছেন প্রবীণতম বিচারপতি। সেই প্রবীণতম বিচারপতিকে অস্থায়ীভাবে প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার গ্রহণে করার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।’

‘এটা তো স্বাভাবিক জিনিস, আইনানুগ জিনিস। এটা নিয়ে তো স্পেকুলেশন (কল্পনা) করার তো প্রয়োজন নেই। স্পেকুলেশন ওনারা কেন করছেন তা আমি একটু স্পেকুলেট করি। ওনারা স্পেকুশেলন করছেন এই কারণে আমার মনে হয় ওনারা কিছু একটা ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছিলেন। গণতন্ত্রের ধাবাবাহিকতা নসাৎ করার একটা চেষ্টা করছিলেন। সেই চেষ্টাটা সফল হবে না, এজন্য ওনারা কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। ওনাদের অমূলক স্পেকুলেশনের জবাব আমাদের দেয়ার দরকার নেই।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি আমাদের জানিয়েছেন, আমরা প্রধান বিচারপতিকে বিশ্বাস করি। তিনি বলেছেন তিনি অসুস্থ, এর উপর আমি কোনো প্রশ্ন করতে রাজি না। তিনি আমাদের যেভাবে বলেছেন ঠিক সেইভাবে...যেহেতু সুপ্রিম কোর্টটা চলতে হবে এবং সংবিধানে যে প্রভিশন আছে, সেই প্রভিশন অনুযায়ী একজন অ্যাকটিং চিফ জাস্টিস থাকবেন।’

এক মাসের ছুটি শেষে তো প্রধান বিচারপতি আবার ফিরে আসবেন- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি ও আমি দোয়া করি।’

ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের রিভিউ কবে নাগাদ করা হবে- জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এখনও পর্যবেক্ষণ চলছে। আমরা রিভিউ করব। কিন্তু আমরা জাজমেন্ট নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রিভিউ দাখিল করল। এর কারণ এটি ৭৯৯ পৃষ্ঠার একটি জাজমেন্ট। এটি রিভিউ করা একদিনের ব্যাপার নয়।’

আরএমএম/এআরএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।