শিগগিরই পুনর্গঠিত হচ্ছে মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনাল

মুহাম্মদ ফজলুল হক
মুহাম্মদ ফজলুল হক মুহাম্মদ ফজলুল হক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:০১ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নিয়োগ না হওয়ায় প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বিচারিক কার্যক্রম। এখন বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে।

তবে বন্ধ থাকা ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কাজে গতি ফেরাতে শিগগিরই একজন বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হচ্ছে। এজন্য বিচারপতি নিয়োগসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট থেকে একজন বিচারকের নাম প্রস্তাব করে পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে। এদিকে শিগগিরই নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয় সূত্র। তিন সদস্যের অন্য বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হতে পারে সাবেক কোনো জেলা জজকে।

সূত্রমতে, গত ১৫ জুন থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে থাকা ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর সাবেক বিশেষ জজ মো. আবু আহমেদ জমাদার নিয়োগ পেতে পারেন। তিনি যদি নিয়োগ পান তাহলে তিন সদস্যই হবেন সাবেক জেলা জজ। বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম জেলা জজ থাকা অবস্থায় ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান। বিচারপতি আমির হোসেন গাজীপুরের জেলা জজ থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। গত ফেব্রুয়ারিতে স্থায়ী বিচারপতি হন তিনি।

এ ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান হবেন বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। তবে চেয়ারম্যান পদে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের নামও শোনা গেছে। বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার পর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হবে একজনকে আদালতের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের কাঙ্খিত সেই চেয়ারম্যান পদে কাকে নিয়োগ দেয়া হতে পারে তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ও আইন অঙ্গনে চলছে নানা গুঞ্জন। কে হচ্ছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এবারের নতুন চেয়ারম্যান।

এ লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আমির হোসেনকে নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে। ট্রাইব্যুনালের নিয়োগ বিষয়ে জানতে চাইলে শিগগিরই নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

গত ১৩ জুলাই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক মারা যান। এরপর দুই মাস পার হয়ে গেলেও বিচারক নিয়োগ না দেয়ায় থমকে আছে ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ। এ দুই মাস ট্রাইব্যুনালের অপর দুই বিচারপতি মামলার নির্ধারিত দিনে চেম্বারে বসে নতুন তারিখ ধার্য করে গেছেন। কারণ বিধি অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠন হবে তিন সদস্য নিয়ে। এর মধ্যে একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। বাকি দুজন সদস্য থাকবেন।

তবে বিধি অনুযায়ী যদি চেয়ারম্যান কোনো কারণে সাময়িক অনুপস্থিত থাকেন তাহলে দুজন সদস্য ট্রাইব্যুনালের কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। তবে কোনো মামলার রায়, অভিযোগ আমলে নিতে এবং (ফরমাল চার্জ গঠন) অভিযোগ গঠনের কাজ করতে পারবেন না। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার ফলে বিচারকাজ স্থবির হয়ে পড়েছিল। এখন বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে একজনকে চেয়ারম্যান করার পর ট্রাইব্যুনাল আবার সচল হবে।

ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার কেশব রায় চৌধুরী জাগো নিউজকে জানান, বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে একটি মামলার রায় ঘোষণার অপেক্ষায়। পাঁচটি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে। এছাড়া আরও মামলা রয়েছে অভিযোগ আমলে নেয়ার পর্যায়ে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে ৩৩টি মামলা বিচারাধীন, যাতে আসামির সংখ্যা ১৪১।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ পুরনো হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার সংখ্যা বাড়ার কারণে ২০১২ সালের ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

প্রথমে হাইকোর্টের বিচারপতি নিজামুল হককে চেয়ারম্যান, বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এ কে এম জহির আহমেদকে সদস্য করে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

দুই বছর পর ২০১২ সালের ২৩ মার্চ বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ গঠিত হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো. শাহীনুর ইসলাম।

ট্রাইব্যুনাল-১ এর সদস্য করা হয় হাইকোর্টের বিচারপতি আনোয়ারুল হককে। ২০১২ সালের মাঝামাঝি শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ট্রাইব্যুনাল-১ এর সদস্য জহির আহমেদ পদত্যাগ করেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ নামে একটি ট্রাইব্যুনাল করা হয়। ট্রাইব্যুনাল গঠন করার পর এ পর্যন্ত ২৮ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ২৮ মামলায় ৫৫ জন আসামি ছিল, যার মধ্যে অধিকাংশেরই মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।

এফএইচ/ওআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।