কতিপয় র‌্যাব সদস্যের জন্য পুরো বাহিনী দায়ী নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:০৬ পিএম, ২২ আগস্ট ২০১৭

 

সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাবের কতিপয় সদস্যের কারণে গোটা বাহিনীকে দায়ী করা যায় না- রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, র‌্যাব একটি এলিট ফোর্স। তাদের দায়িত্ব হলো জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া। তারা জনগণের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অনেক কাজ করেছে। কিন্তু এ বাহিনীর কতিপয় সদস্যের কারণে গোটা বাহিনীকে দায়ী করা যায় না। যে অপরাধ তারা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিপ্রাপ্য ছিল।

হাইকোর্টের রায়ে মামলার প্রধান চার আসামিসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১১ আসামিকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া হয়। বাকি নয়জনের বিচারিক আদালতের সাজা বহাল রাখেন আদালত।

আদালত পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, আসামিরা যে ধরনের অপরাধ করেছে, যদি তারা ছাড়া পেয়ে যায় তাহলে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণ আস্থাহীনতায় ভুগবে।

আদালত বলেন, র‌্যাব রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিশেষ বাহিনী। তাদের দায়িত্ব হলো জনগণের জানমাল রক্ষা করা এবং নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু এ বাহিনীর কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল সদস্য নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে অপরাধ সংঘটিত করে। ফলে তাদের বিচার হয়েছে। নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এ বাহিনীর প্রতি মানুষের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। কিন্তু কতিপয় সদস্যের কারণে সামগ্রিকভাবে গোটা বাহিনীকে দায়ী করা যায় না।

আদালত আরও বলেন, কিছু উচ্ছৃঙ্খল র‌্যাব সদস্যের কারণে এ বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল অর্জন ম্লান হয়ে যেতে পারে না। তাদের সন্ত্রাসবিরোধী গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ধূলিস্যাৎ হতে পারে না। কিন্তু এ বাহিনীর কতিপয় সদস্যের শয়তানি প্রবৃত্তি মানব সভ্যতার মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।

পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, যে সাতজনকে হত্যা করা হয়েছে, র‌্যাব হেফাজতে তাদের মৃত্যুযন্ত্রণা ছিল ভয়বহ ও অকল্পনীয়। র‌্যাব সদস্যরা এতটাই নির্দয় ছিল যে, তাদের হত্যার পর তলপেট ছুরি দিয়ে কেটে বস্তাবন্দি করা হয়। প্রতিটি বস্তার সঙ্গে ১০টি ইট বেঁধে দেয়া হয় যাতে লাশ নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। তাদের এ নৃশংসতা প্রমাণ করে মৃতদেহের ওপর তারা কতটা নির্দয় ছিল।

আদালত আরও বলেন, আসামিরা যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তাতে উঠে এসেছে, হত্যাকাণ্ডটি ছিল সুপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। আর্থিক লেনদেন হয়েছে নূর হোসেনের সঙ্গে। এই নূর হোসেনই হলো হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড। তার সঙ্গে ছিল তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর আরিফ ও কমান্ডার মাসুদ রানা।

আসামিপক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এ মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী কোনো সাক্ষ্য নেই এবং আর্থিক লেনদেনেরও কোনো প্রমাণ নেই। এ বিষয়ে আদালত বলেন, র্যাবের এডিজি জিয়াউল হাসান টাকার লেনদেনের বিষয়ে আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এছাড়া নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম তারিক সাঈদের সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, নূর হোসেন যত টাকা দিয়েছে তার চেয়ে বেশি টাকা দেব, নজরুলকে ছেড়ে দেন।

তার ওই বক্তব্যই প্রমাণ করে যে, টাকার বিনিময়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। অনৈতিক লেনদেনের আর কোনো প্রমাণের প্রয়োজন পড়ে না।

মৃত্যুদণ্ড থেকে সাজা কমিয়ে যাদের যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছে সেই বিষয়ে পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, অপরাধের ধরন বিবেচনায় নিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলে সেটা হবে কঠোর শাস্তি। তাই তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়াই যুক্তিযুক্ত।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারওয়ার কাজল বলেন, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সি, আল আমিন শরিফ, মো. তাজুল ইসলাম এখনও পলাতক। এছাড়া যাবজ্জীবন পাওয়াদের মধ্যে মো. সানাউল্লাহ সানা, ম্যানেজার শাহজাহান এবং ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কর্পোরাল মো. মোখলেছুর রহমান, এএসআই মো. কামাল হোসাইনও পলাতক রয়েছে।

করপোরাল মো. মোখলেছুর রহমান, এএসআই মো. কামাল হোসাইন আপিল না করায় বিচারিক আদালতের দেয়া সাজাই বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।

এফএইচ/এমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।