বঙ্গবন্ধু হত্যার তদন্তে দুর্বলতা ছিল : প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:২৩ এএম, ১৫ আগস্ট ২০১৭
ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে রাঘববোয়ালরা জড়িত থাকলেও তদন্তে দুর্বলতার কারণে তাদের বিচারের আওতায় আনা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগে আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

রক্তদান কর্মসূচিতে সুপ্রিম কোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আজ আমাদের ইতিহাসের একটি মর্মান্তিক দিন। বাংলার মানুষ স্বাধীনতার স্থপতিকে শুধু হারায়নি; তার বিশ্বাস, তার ভবিষ্যৎ সবকিছু জনবিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল ঘাতকরা। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি।

‘এই উপমহাদেশের দুই জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে। একজন মহাত্মা গান্ধী, আরেকজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু এই দুই মহান নেতার মৃত্যুর কারণ কিন্তু ভিন্ন। মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করা হয়েছিল কারণ তিনি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চলমান রায়ট (দাঙ্গা) বন্ধ করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ওই সময় পশ্চিমবঙ্গ-পাঞ্জাবে রক্তের বন্যা বইছিল। সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জওহরলাল নেহরু এবং ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল। মহাত্মা গান্ধী রায়ট বন্ধে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা কোনো উদ্যোগ নেননি।’

এসকে সিনহা বলেন, ‘রায়টের সময় পশ্চিমবঙ্গে শুধু ১০ লাখ লোক মারা যায়। এর মধ্যে দুই লাখের ওপর মুসলমান মারা যায়। এরপর মহাত্মা গান্ধী আমরণ অনশনে বসলেন এবং বললেন, রায়ট যদি বন্ধ করা না হয় আমি অনশন বন্ধ করব না। ভারত সরকার তখন সজাগ হলো, রায়ট বন্ধ হয়ে গেল। হিন্দু উগ্রবাদী নাথুরাম গডসে সহ্য করতে না পেরে তাকে হত্যা করল। এটা সম্পূর্ণভাবে সাম্প্রদায়িকতা, অন্ধ বিশ্বাস।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড হলো কাপুরুষোচিত। বঙ্গবন্ধু হয়তো কারও শত্রু বা কারও বিরাগভাজন হতে পারেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে রাসেল, বঙ্গবন্ধুর দুই ছেলের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী, আজ পত্রিকায় পড়লাম তাদের গায়ে হলুদের চিহ্ন ছিল...। সম্পূর্ণ পরিবারকে ধ্বংস করা হলো। তারা তো কোনো পলিটিক্সে যুক্ত ছিল না। ঘাতকদের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর সমস্ত পরিবারকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটার সঙ্গে পৃথিবীর কোনো হত্যার মিল পাওয়া যায় না। আমরা স্তম্ভিত হয়ে যাই যেভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছিল! আরও কষ্টদায়ক হলো, বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে হত্যাকারীদের রাষ্ট্রের আইন দ্বারা বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আমি এই বিচার বিভাগের একজন সদস্য হিসেবে অত্যন্ত গর্ববোধ করছি যে, এই সুপ্রিম কোর্টই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে এই বিচারের রায় প্রশস্ত করেছিল।’

Sinha

তিনি বলেন, ‘এই মামলায় একটি গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। আমি আপিল বিভাগের যখন কনিষ্ঠ বিচারক, প্রকৃতপক্ষে আমি তখন অসুস্থ ছিলাম। সিঙ্গাপুরে তখন ক্যান্সারের ট্রিটমেন্ট চলছিল। ট্রিটমেন্টে থাকাকালে মামলাটির বিচারের জন্য বেঞ্চ গঠন করা নিয়ে প্রবলেম হয়েছিল, তখনই আমাকে অনুরোধ করা হয় যে, তাড়াতাড়ি চলে আসেন। তখনও আমি জানি না, আমি বাঁচতে পারব কি না।’

‘যাই হোক ট্রিটমেন্ট বাদ দিয়ে আমি চলে আসলাম। শপথ নিয়ে তারপর সিঙ্গাপুরে গিয়ে ট্রিটমেন্ট নিলাম। আমি নথি পর্যালোচনা করে দেখলাম যে, এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে আরও অনেক রাঘববোয়াল জড়িত ছিল। কিন্তু ইনভেস্টিগেশনের ত্রুটির জন্য আমরা তাদের আর বিচারে সোপর্দ করতে পারিনি। যদিও আমাদের রায়ে আমরা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছি, এটা একটি ক্রিমিনাল কন্সপিরেসি, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল এবং তাদের (ঘাতক) বিচারের সোপর্দ করার জন্য।’

‘আজ আমি আর বক্তব্য দেব না, আজ আমাদের জাতির জন্য একটি দুঃখময় দিন। আমি প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর থেকে পরপর দুই বছর এদিনে রক্তদান কর্মসূচি পালন করেছি। উনার (বঙ্গবন্ধু) যে রক্ত ঝরেছিল, আজ এই রক্তদানের মাধ্যমে; আমাদের বিচারক, কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা রক্তের অভাবে ট্রিটমেন্ট পাচ্ছেন না তাদের সেবার মাধ্যমে তার ঋণের কিছুটা হলেও পরিশোধের প্রয়াসমাত্র’- যোগ করেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

এফএইচ/এসআর/জেআইএম/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।