বৃষ্টি নেই, তবুও ছাতা মাথায় দিলদার
রোববার বেলা ২টা। বৃষ্টি নেই, রোদের তীব্রতাও নেই, আবহাওয়া স্বাভাবিক। ঠিক এমন সময় ঢাকা মহানগর আদালত প্রাঙ্গণে ছাতা মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ। বনানীর আলোচিত ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি সাফাত আহমেদের বাবা তিনি।
দিলদার আহমেদকে এ অবস্থায় দেখে অনেকেই কানাঘুষা করতে থাকেন। আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত অনেকেই তার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ওই যে ধর্ষক সাফাতের বাবা। মানুষ যেন তাকে চিনতে না পারে সেজন্য ছাতা মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আবার অনেকেই তার মাথায় ছাতা থাকায় তাকে ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন।
এ সময় জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয় দিলদার আহমদের। তার কথায় জানা যায়, তিনি তার ছেলে সাফাতের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। এই প্রথম তিনি আদালতে এসেছেন বলেও জানান।
তিনি বলেন, ‘আজ মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। আমার ছেলেকে কাশিমপুর কারাগার থেকে আনা হয়েছে। তাকে দেখতে মূলত আদালতে এসেছি।’
এসময় আদালত প্রাঙ্গণে দিলদার আহমেদের সঙ্গে আরও অনেকে ছিলেন।
উল্লেখ্য, রোববার রাজধানীর বনানীর আলোচিত ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা মামলাটির অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে সময়ের আবেদন দাখিল করেন। ঢাকার ২ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শফিউল আজম সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।
এর আগে ২৪ জুলাই মামলার প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। আসামি পক্ষের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ৬ আগস্ট দিন ধার্য করেন। সময়ের আবেদনের পেছনে আসামিপক্ষ কারণ দেখিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। মামলার সার্টিফায়েড কপি না পাওয়ায় আদালতের কাছে সময়ের আবেদন করেন তারা।
এবারও ওই একই কারণ দেখিয়ে সময়ের আবেদন করা হয়।
চলতি বছরের ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে জন্মদিনের পার্টির কথা বলে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। ঘটনার প্রায় ৪০ দিন পর ৬ মে সন্ধ্যায় বনানী থানায় ধর্ষণের অভিযোগে সাফাতসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করা হয়।
৮ জুন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম দেলোয়ার হোসেনের আদালতে সাফাতসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক ইসমত আরা এমি। অভিযোগপত্রে ৪৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
১৩ জুলাই ঢাকার ২ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শফিউল আজম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
আসামি সাফাত ও নাঈমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯ (১) ধারা ও অপর আসামিদের বিরুদ্ধে ৯ (১) এর ৩০ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
অভিযুক্ত পাঁচজন হলেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী।
জেএ/এসএইচএস/আরআইপি